দুই জমজ ভাইয়ের বাস্তবিক জীবনের গল্প
ছাব্বিশ বছর আগে এক ট্রাক ড্রাইভারের বৌয়ের কোল জুড়ে একই সাথে দুটি বাচ্চা এলো। দুটোই ছেলে । একটা ছেলে রুষ্ট পুষ্ট আরেকটা খুবই ছোট, রুগ্ন হ্যাংলা-পাতলা।ছোট বাচ্চাটার পেটের চামড়া এতোটাই পাতলা ছিল যে খালি পেটের উপর থেকে বাচ্চাটার নাড়িভুড়ি দেখা যেত। বড় বাচ্চা ছেলেটা মায়ের বুকে দুধ মুখে নিলেও ছোটটা কিছুতেই কোন কিছু খেতে চাইছেনা। পাড়ার বুড়ি মানুষগুলো ছোট বাচচাকে দেখিয়ে মাকে বলতো , " এই ছোটটা তো বাচবে বলে মনে হয় না। "
তিন দিন হয়ে গেল। বড় বাচ্চাটা নিয়মিত মায়ের স্তন মুখে দিলেও ছোটটা তেমন কিছুই খেল না। মাঝে মাঝে ধুকধুক করে। নড়াচড়া ও বেশি করতো না। ঐ গ্রামে এর আগে আর কখনো জমজ বাচ্চা হয়নি।
তাই গ্রামের অনেক মানুষই ঐ জমজ দুটোকে দেখতে ভিড় করতো। একদিন এক বুড়িতো বলেই বসলো , "হারে রে আনু, এই ছোটটাতো কিছুই খায়না। শুধু ধুকপুক ধুকপুক করে। এটাকে ঐ জঙ্গলে ফেলে আসি। এটা মনেহয় বাচবে না।"
শুনে আনু ঐ ছোট বাচ্চাকে কোলে নিয়ে কেদে ফেলে।নাড়ি ছেড়া ধন কোন মা কি জঙ্গলে ফেলতে পারে!পাচদিন পর ছোটটা কাপড়ের টুকরায় করে মায়ের দুধ খাওয়া শুরু করলো। মায়ের সে কি আনন্দ !
দিন যায় মাস যায় আনু ঐ বাচচা দুটোকে একইসঙ্গে যত্নে বড় করে তুলতে থাকে।একটা সময় তারা দুজন কথা বলা শেখে। ইসকুলে যায় একইসঙ্গে । জমজ বাচ্চা দুইটার একই পোশাক তাদের কিনে দেয় তাদের ট্রাক ড্রাইভার বাবা।
সমস্যা ও কম না তাদেরকে নিয়ে। যখন কেও একজন অসুস্থ হলে পরে দেখা যায় দুজন জমজ ছেলেই অসুস্থ ।জ্বর এলে একসাথে শুইয়ে মাথায় পানি দেওয়া । ডাক্তার দেখানো ।এক উটকো ঝামেলা।
আবার যখন একটু বড় হলো দুটো তখন আরেক নতুন ঝামেলা শুরু হলো । কোন একজনকে গ্রামের কোন ছেলে মারধর করলে পরে ঐ দুজন জমজ ছেলে একইসঙ্গে গিয়ে যেখান ঐ একজনকে পায় সেখানেই তাকে গনধোলাই দিয়ে বাড়ি আসে।
প্রায় প্রতিদিন গ্রামের বাচচা ছেলেদের মা বাবারা অভিযোগ দেয় আনুর কাছে ছেলেদের দেখিয়ে," দেখো তোমার বদমায়েশ জমজ ছেলেদুটো আমার ছেলেটাকে একা পেয়ে কি মারটা না মারছে। "
আনু চুপচাপ শোনে আর বকা দেয় সন্তান দুটোকে তোরা কি মানুষ হবি না! তোদের একজনকে কেও মারলেই তোরা দুজন গিয়ে মেরে আসবি? এটা কেমন কথা!
এরপর আরো বড় হলো দুটো বাচচা। একজন কলেজে কলেজে গেল আরেকজন ততদিনে আর্ট শিল্পী ।তবে যাই করুক তারা খাবার সময় হলে একই সাথে তারা খাবার খায়। রাত হলে একই বিছানায় ঘুমায়। 16 টা বছর তারা কখনোই আলাদা জায়গায় ঘুমাইনি।
একদিন বড় জমজ ছেলেটা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে ভারতে গেল । দু বছর পর ফিরে এলো বাড়িতে । ভারতে গিয়ে বড়টা শিখে এসেছে কিভাবে ভাস্কর্য তৈরি করতে হয়। একদিন শখের বশে ছেলেটা একটি মাটির প্রতিমা তৈরি করে বাড়ির সামনের রাস্তায় দাড় করিয়ে রাখলো।
গ্রামের মানুষ দেখে গালাগালি দিলো। সে আরো কিছু প্রতিমা তৈরি করলো। এবার গ্রামের মানুষের মধ্যে শুরু হলো কানাঘুষা ," এ ছেলে নিশ্চয়ই হিন্দু হয়ে গেছে। একে গ্রাম থেকে খেদাতে হবে।নইলে আমাদের ইসলাম ধর্মের গাড় মেরে ছাড়বে।"
সত্যি সত্যিই একদিন ঐ গ্রামের হুজুররা তিনচার গ্রামবাসীদের ডেকে জড়ো করে লাঠি সোটা রামদা দেশি হাতিয়ার নিয়ে এক সন্ধায় ঐ জমজ ছেলেটার উপর আক্রমণ করতে এলো।
প্রান ভয়ে জমজ বড় ছেলেটা আবার রাতের অন্ধকারে পালিয়ে গেল ভারতে। ঐ যে গেল আর এলোনা এই বাংলাদেশে।
এপারে একা পড়ে রইলো ঐ ছোট রুগ্ন ছেলেটা মনে অনেক কষ্ট নিয়ে ।রুগ্ন ছেলেটার যখন অসুখ হতো মা আনু খুব কান্নাকাটি করতো। বলতো," আমার আলমগীর ও অসুস্থ । ও ভারতে কোথায় আছে কেমন আছে একমাত্র আল্লাহু জানে!
কয়েক বছর পর জমজ দুই ভায়ের মা মারা গেল।
আলমগীর জানলোও না। আলমগীর আনুর বড় ছেলের নাম যার ফেসবুকে আইডির নাম Salman Mondol আর ছোটটার নাম জাহাঙ্গীর আলম।
সামান্য প্রতিমা তৈরির জন্য জাহাঙ্গীরের জমজ ভাইকে তার থেকে দুরে সরিয়ে দিলো গ্রামের অ*শিক্ষিত মূ*র্খ মু*সলমান সু*দির ভাইয়েরা। সেই থেকে মু*সলমান আর ই*সলাম ধর্মের প্রতি প্রচণ্ড ঘৃনা চলে এলো সেই গ্রামের ছোট হ্যাংলা পাতলা আরেক জমজ জাহাঙ্গীরের মনে।
সেই ঘৃনা দিত যত যায় বাড়ে আর বাড়ে কমে না। সে ভাবে এই বাংলাদশের মূ*র্খ আ*চো*দা মু*সলমানরা ধর্মীয় অনুভুতির নামে আর কত ভাইকে তাদের ভাইয়ের থেকে দুরি সরিয়ে দেবে!
Comments
Post a Comment