উপবীত বা পৈতার মাহাত্ম্য , উপবীত বা পৈতা কাহাকে বলে?
যাহা তিনটি দণ্ডে গ্রথিত ও নয়টি সূত্রের সমাহার তাহাকে উপবীত বা পৈতা বলা হয়। ইহা ব্রাহ্মণদের পবিত্র চিহ্ন। পৈতার এই নয়টি সূত্র নয়টি গুণের প্রতীকস্বরূপ।
এই নব গুণাবলী নিম্নরূপ :
(১) আচার (সদাচার) (২) বিনয় (৩) বিদ্যা (৪) শম (৫) দম (৬) তপস্যা (৭) ক্ষমা (৮) শৌচ ও (৯) অহিংসা।
উপরিউক্ত নয়টি গুণ যথাযথভাবে পালন করিয়া খাঁটি ব্রাহ্মণ হইতে হইবে—ইহা স্মরণ রাখিবার জন্য পৈতা ধারণ করিবার প্রয়োজন পৈতাকে ব্রহ্মসূত্র বা যজ্ঞসূত্র বলা হয়। ব্ৰহ্মসূত্রে জগৎ গাঁথা অর্থাৎ জগতে সর্বত্র সবকিছুর মধ্যে এবং সকল প্রাণীর মধ্যে ব্রহ্ম বিরাজিত আছেন—ইহা স্মরণ করিয়া উচ্চ-নীচ, জ্ঞানী-অজ্ঞানী, শক্তিমান-দুৰ্ব্বল—সকলের প্রতি সমদর্শী হইয়া চলিতে হইবে। এইজন্য পৈতাকে ব্রহ্মসূত্র বলা হয়। | আর পবিত্র যজ্ঞ করিয়া অগ্নি ও গুরুকে সাক্ষী রাখিয়া এই পবিত্র পৈতা বা উপবীত ধারণ করা হয়, সেইজন্য ইহার অপর নাম যজ্ঞসূত্র।
উপবীত গ্রন্থি দিবার
ও
পরিধান
করিবার
মন্ত্র:
ওঁ যজ্ঞোপবীতং পরমং পবিত্রং বৃহস্পত্যেং সহজং পুরস্তাৎ।
আয়ুষ্যমগ্রং
প্রতিমুঞ্চ শুভ্রং যজ্ঞোপবীতং বলমস্তু
তেজঃ।।
গায়ত্রী
গায়ত্রী
মন্ত্র হল বৈদিক হিন্দুধর্মের
একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্র। প্রচলিত
বিশ্বাস অনুসারে, বেদের অন্যান্য মন্ত্রের
মতো গায়ত্রী মন্ত্রও "অপৌরষেয়" (অর্থাৎ, কোনো মানুষের দ্বারা
রচিত নয়) এবং এক
ব্রহ্মর্ষির কাছে (গায়ত্রী মন্ত্রের
ক্ষেত্রে ব্রহ্মর্ষি বিশ্বামিত্র) প্রকাশিত। এই
মন্ত্রটি বৈদিক সংস্কৃত ভাষায়
রচিত। এটি
ঋগ্বেদের (মণ্ডল ৩।৬২।১০)
একটি সূক্ত। গায়ত্রী
মন্ত্র গায়ত্রী ছন্দে রচিত।[১] হিন্দুধর্মে গায়ত্রী
মন্ত্র ও এই মন্ত্রে
উল্লিখিত দেবতাকে অভিন্ন জ্ঞান করা
হয়। তাই
এই মন্ত্রের দেবীর নামও গায়ত্রী। গায়ত্রী
মন্ত্র দিয়ে শুধু পূজাই
হয় না, গায়ত্রী মন্ত্রকেও
পূজা করা হয়।
গায়ত্রী মন্ত্র:
ওঁ ভূর্ভুবঃ স্বঃ তৎ সবিতুর্বরেণ্যং ভর্গো দেবস্য ধীমহিধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ।।
দেবী গায়ত্রীর তিন রূপ। সকালে তিনি ব্রাহ্মী; রক্তবর্ণা ও অক্ষমালা-কমণ্ডলুধারিনী। মধ্যাহ্নে বৈষ্ণবী; শঙ্খ, চক্র, গদা ধারণকারিনী। সন্ধ্যায় শিবানী; বৃষারূঢ়া, শূল, পাশ ও নরকপাল ধারিনী এবং গলিত যৌবনা। শব্দ-কল্পদ্রুম অনুসারে, যজ্ঞকালে একবার ব্রহ্মার স্ত্রী সাবিত্রী একা যজ্ঞস্থলে আসতে অস্বীকৃত হলে, ব্রহ্মা ক্রুদ্ধ হয়ে অন্য নারীকে বিবাহ করে যজ্ঞ সমাপ্ত করার পরিকল্পনা করেন। তার ইচ্ছানুসারে পাত্রী খুঁজতে বের হয়ে এক আভীরকন্যাকে (গোয়ালিনী) পাত্রী মনোনীত করেন ইন্দ্র। বিষ্ণুর অনুরোধে তাকে গন্ধর্ব মতে বিবাহ করেন ব্রহ্মা। এই কন্যাই গায়ত্রী।
গায়ত্রীর ধ্যানে আছে, তিনি সূর্যমণ্ডলের মধ্যস্থানে অবস্থানকারিনী, বিষ্ণু বা শিবরূপা, হংসস্থিতা বা গরুড়াসনা বা বৃষবাহনা। তিনি একাধারে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব। হিন্দু বিধান অনুসারে, সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায় গায়ত্রী ধ্যান করতে হয় এবং এই মন্ত্র ধ্যান বা পাঠে মুক্তি প্রাপ্ত হয় বলে এর নাম ‘গায়ত্রী’। বেদজ্ঞ আচার্যের কাছে এই মন্ত্রে দীক্ষিত হলে তার পূণর্জন্ম হয় ও তিনি দ্বিজ নামে আখ্যাত হন। সেই কারণে দ্বিজ অর্থাৎ ব্রাহ্মণগণের উপাস্য। বৈদিক গায়ত্রী মন্ত্রে আদলেই অন্যান্য দেবতার গায়ত্রী রচিত হয়েছে, দ্রষ্টব্য গণেশ, কালী, গুহ্যকালী, নারায়ণ, রাধা প্রভৃতি । উপনয়নের পর গায়িত্রী মন্ত্রের জ্ঞান ও জপের যোগ্যতা লাভ করে থাকে।
আরো পড়ুন:
আরতি তত্ত্ব বা আরতি-মাহাত্ম্য ও আরতির শাস্ত্রীয় বিধি
ভাইভোঁটার শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা ও উৎপত্তি ইতিহাস
Comments
Post a Comment