শরীর রক্ষার প্রয়োজনীয়তা কি?

 মানব জীবনে ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোহ্ম এই চতুর্বর্গ শ্রেষ্ঠ ফললাভ করতে চাইলে শরীর সুস্থ্য রাখার প্রয়োজন একান্ত। স্বাস্থ্য এক প্রকার সম্পদ। স্বাস্থ্য ভাল না থাকলে কোন কাজে মন বসেনা। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র এজন্যই ঘোষনা করেছেন, ধর্মার্থ-কাম-মোহ্মাণাম্ আরাগ্যং মূল মুত্তমম্।

মহর্ষি সুশ্রুত: প্লাস্টিক সার্জারির জনক

স্বাস্থ্য রক্ষায় সনাতন ধর্মে ব্যাপকভাবে আলোচনা করা হয়েছে বেদের অথর্ব খণ্ডে। এছাড়া চিকিৎসা শাস্ত্রে  সুশ্রুত সার্জারির জনক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত।আমরা জানি, ভারতবর্ষ ধর্মের দেশ। ধর্মকে ধরেই আমাদের জাতি, জীবন ও সম্পদ। আমাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সভ্যতা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি সবই জাতীয় ধর্ম ভিত্তিক। ঋষি মুনিগণই আমাদের একমাত্র সম্পদ।বর্তমানে আমরা সনাতন ধারা উপেক্ষা করে বিজাতীয় ধারাকে জীবনে মূল্য দিয়েছি বেশী। এর ফলে আমাদের জন্য কোনটি প্রয়োজন, কোনটি অপ্রয়োজন, কোনটি ভাল, কোনটি মন্দ, বিচার করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। বেশী ভাল নিতে গিয়ে যে অনেক মন্দ গ্রহণ করেছি তার ফল আমরা ইতিমধ্যে ভোগ করতে শুরু করেছি। আমাদের আপন ঐতিহ্য, শিক্ষা, সম্পদ, সংস্কৃতি, সভ্যতা, কৃষ্টি ও কালচার একেবারে বিসর্জন দিয়ে বিজাতীয় ভাবে এমন করে ডুবে গেছি যে, আমাদের জন্য যা প্রয়োজন নয়, বর্তমানে আমরা তারই মূল্য দিচ্ছি বেশী। এর ফলে আমাদের দেহমনে যে প্রভাব পরছে সেই ভার স্বাস্থ্য কুলাতে পারছেনা বলেই বাঙ্গালীর গড় আয়ু দিন-দিন কমে যাচ্ছে। বৈজ্ঞানিক প্রভাবে জাতীয় জীবনে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে অনেক উন্নতি ও মানন্নোয়ন হয়েছে হচ্ছে। কিন্তু মানুষ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও দীঘায়ু হতে পারছেনা। স্বাস্থ্য রক্ষার অনেক উন্নত উপায় বেড়েছে কিন্তু দীর্ঘায়ুর উপাদান বাড়ছেনা। এর পরেও কি আমাদের জাতীয় সনাতন কৃষ্টি সভ্যতাতে স্বাস্থ্যনীতিকে উপেক্ষা করা উচিত? উচিত কি একেবারে আপন সংস্কৃতির আমূল পরিবর্তন এবং নিজেদের সম্পদকে অবহেলা  করা? একারণেই আমরা বলতে চাই, পুরাতনকে উপেক্ষা করে কি নুতন ? না.... পুরাতনকে নিয়েই নুতন?

সংসারে শ্রেষ্ঠত্বতা লাভ করার ইচ্ছা থাকলে সর্বপ্রথম দৈহিক উন্নতি আবশ্যক। কারণ সুস্থ্য, সবল, দেহ মানুষকে দীর্ঘ জীবন ধারণের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। রোগ প্রতিরোধ শক্তি গড়তে সাহায্য করে। মনোবল সৃষ্টি ও বৃদ্ধি করে। জীবনের ক্ষতি পুরণের সহায়তা দান করে। এ কারণে জীবন ধারণের জন্য দেহ গঠনে স্বাস্থ্য রক্ষা একান্ত প্রয়োজন। শাস্ত্রে বলাই আছে – “নায়মাত্মা বলহীনেন লভ্য” অর্থাৎ বল ছাড়া জীবনে কোন শ্রেষ্ঠ সম্পদ লাভ করা যায় না। শারিরীক এবং মানসিক উভয় বলই প্রয়োজন। দেহ ও মন পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত বলেই অগ্রে স্বাস্থ্য রক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। “Health is wealth” প্রবাদ বাক্যটি একারণেই অভিব্যক্ত হয়েছে।

আরো পড়ুন:   

                      যোগ, মহর্ষি পতঞ্জলি, অষ্টাঙ্গ যোগ

                     স্বামী শ্রীপ্রণবানন্দ মহারাজ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী ও ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ

                     আরতি তত্ত্ব বা আরতি-মাহাত্ম্য ও আরতির শাস্ত্রীয় বিধি 

                     ভাইভোঁটার শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা ও উৎপত্তি ইতিহাস

                     কলিযুগে সংঘ শক্তি