যোগ, মহর্ষি পতঞ্জলি, অষ্টাঙ্গ যোগ

 যোগ

কোন কিছুর সাথে যুক্ত হওয়াকে যোগ বলে। অর্থাৎ জীবাত্মা থেকে পরাত্মায় যুক্ত হওয়া। শ্রীমদ্ভগবতগীতায় ১৮টি অধ্যায়ের শেষে যোগ শব্দটি রয়েছে। যেমন: অর্জুন বিষাদযোগ, জ্ঞানযোগ ইত্যাদি। যোগ দর্শন রচয়িতা মহর্ষি পতজ্ঞলি। যোগকে ৮টি ভাগে বিভক্ত করেন। তিনি যোগ সাধনার ব্যfপক বিস্তৃতি ঘটান।



'পতঞ্জলি'! শব্দটা শুনলেই যোগগুরু রামদেব বাবার প্রতিষ্ঠানিক পণ্য ছাড়া আর কিছুই চোখে ভাসে না। কিন্তু প্রাচীন ভারতের ইতিহাস বলছে অন্য কিছু। ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে প্রাচীনকালে ভারতে ছিলেন 'পতঞ্জলি' নামে হিন্দু যোগ দর্শনের একজন ধারক। ২১ জুন সোমবার-২০২১ ছিল আন্তর্জাতিক যোগ দিবস। সারা বিশ্বে পাশাপাশি সমগ্র বাংলাদেশে জুড়ে পালন করা হবে এই বিশেষ দিনটি। এই বিশেষ দিনে জেনে নিন ভারতীয় যোগশাস্ত্রের ইতিহাসে অমলিন অবদান রেখে যাওয়া এই মানুষটি সম্পর্কে –

খৃষ্টপূর্ব ৭ম শতকে শিক্ষাক্ষেত্রে তক্ষশীলা খুব প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। খৃষ্টপূর্ব ৭০০ শতক থেকে ৫০০ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত তক্ষশীলার ছিল এক মতামত জানান গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। ব্ৰহ্মদত্ত, কৌটিল্য, পাণিনি, যিবেক ও পতঞ্জলি'র মত মহান পণ্ডিতগণ তক্ষশীলায় অধ্যয়ন করতেন। এদের মধ্যে পতঞ্জলি ছিলেন ভারতীয় যোগদর্শনের প্রবর্তক, মহান দশনিক, ব্যাকরণবিদ ও বিজ্ঞানী। তিনি ছিলেন যোগগশাস্ত্রের স্রষ্টা। হিন্দু যোগ দর্শনের গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণিক শাস্ত্রগ্রন্থ 'যোগসূত্র’র সংকলক ছিলেন পতঞ্জলি। মহাভাষ্য (পাণিনির অষ্টাধ্যায়ী-এর উপর রচিত কাত্যায়নের বৃত্তিকার টীকা) গ্রন্থের রচয়িতা। দ্বাদশ শতাব্দীতে তিনি বিজয় নগরের রাজা বীরবাঙ্কুর প্রধানমন্ত্রীও ছিলেন। তাঁর রচিত গ্রন্থের নাম 'মাধব নিদান'। রোগ নির্ণয়ের জন্য এই গ্রন্থটি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়েছে।

যোগ দর্শনের প্রবর্তক পতঞ্জলির প্রদর্শিত মার্গ 'পাতঞ্জল দর্শন' নামে পরিচিত। পতঞ্জলির যোগশাস্ত্রের চারটি পাদ। প্রথম পাদে আলোচিত হয়েছে যোগের লক্ষণ ও সমাধি। দ্বিতীয় পদে সমাধি লাভের পূর্বে অনুসরণীয় ব্যবহারিক যোগে এবং যম, নিয়ম, আসন ইত্যাদি যোগাঙ্গের কথা আলোচনা করা হয়েছে। তৃতীয় পাদে ধারণা, ধ্যান, সমাধি ও এসবের ফল এবং বিভূতি বা ঐশ্বর্য আলোচিত হযেছে। চতুর্থ পাদে পাঁচ প্রকার সিদ্ধি ও পরা প্রয়োজন কৈবল্যের আলোচনা করা হয়েছে।


মহর্ষি পতঞ্জলি

পুরাণ মতে, পতঞ্জলির জন্মবৃত্তান্ত সম্পর্কে জানা যায়- এক সময় সমস্ত মুনি-ঋষিরা ভগবান বিষ্ণুর কাছে উপস্থিত হন। তাঁরা সমবেতভাবে বিষ্ণুর কাছে জানতে চান ধন্বন্তরী আয়ুর্বেদের মাধ্যমে অসুখ নিরাময়ের উপায় দিয়েছেন। তবুও মানুষ যদি অসুস্থ হ্য়, তখন কি করা উচিত? শুধু শারীরিক অসুস্থতাই ন্য়, কখনও কখনও ক্রোধ, লালসা, লোভ, ঈর্ষা ইত্যাদি থেকে উৎপন্ন মানসিক আবেগজনিত অসুস্থতাও নিরামযের প্রয়োজন হ্য়। এই সব অশুদ্ধি থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে? ঋষিরা যখন তাঁর কাছে নিজেদের বক্তব্য পেশ করেন তখন তিনি আদিশেষকে (সচেতনতার প্রতীক) তাঁদের কাছে পাঠান।

যিনি পৃথিবীতে 'মহর্ষি পতঞ্জলি হয়ে জন্মগ্রহণ করেন। এইভাবে পতঞ্জলি পৃথিবীতে আসেন য়োগের জ্ঞান দান করার জন্য। এই জ্ঞানই 'যোগসূত্র' নামে পরিচিত।

 

জানা যায়, পতঞ্জলি বলেন ১০০০ মানুষ একত্রিত না হলে তিনি যোগসূত্র আলোচনা করবেন না।

সুতরাং সহস্র মানুষ তাঁর জ্ঞান শোনার জন্য বিন্ধ্য পর্বতমালার দক্ষিণ দিকে একত্রিত হলেন। পতঞ্জলির আরেকটি শর্ত ছিল, তাঁর ছাত্রদের ও তাঁর মধ্যে তিনি একটি পর্দা রাখতে হবে। ছাত্রদের কেউ সেই পর্দা ভুলতে পারবে না। তিনি যতক্ষণ না জ্ঞান দান শেষ করছেন, সবাইকে কক্ষে উপস্থিত থাকতে হবে।

পতঞ্জলির সংজ্ঞানুসারে 'যোগ' মানে হল মনের পরিবর্তনকে নিয়ন্ত্রণ করা। বিভিন্ন ধরণের যোগ থাকলেও, প্রত্যেক ধরণের যোগের উদ্দেশ্যই হল মনকে নিয়ন্ত্রণ বা বশ করা। 'যোগ' শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ 'ইউ' থেকে। যার মানে হল একত্রিত করা- আত্মার সাথে পরমাত্মার সংযোগ।



অষ্টাঙ্গ যোগ

ইহা আট () ভাগে বিভক্ত ইহাকে অষ্টাঙ্গ যোগ বলে

() যম: ১.অহিংসা,   ২. সত্য,   ৩. অস্তেয় (চুরি না করা),  8. ব্রহ্মচর্য্য   ৫. অপরিগ্রহ- এই পাঁচ  প্রকার

() নিয়ম: ১.শৌচ, ২. সন্তোষ, ৩. তপস্যা,   ৪.স্বাধ্যায় (শাস্ত্রাদি পাঠ) ও ৫. ঈশ্বর প্রণিধানএই পাঁচ প্রকার

 () আসন: আসন স্থিরভাবে সুখে দীর্ঘক্ষণ একভাবে বসিয়া থাকার নাম আসন ইহা প্রধানতঃ  চার প্রকার

 () প্রাণায়াম:  শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি নিয়ন্ত্রণ ইহা তিন প্রকার: ১.পূরক  অর্থাৎ শ্বাস গ্রহণ করা,  ২.কুম্ভক অর্থাৎ        শ্বাস-  প্রশ্বাস রোধ করা এবং  ৩.রেচক অর্থাৎ শ্বাস বাহির করা

 () প্রত্যাহার: বাহিরের বিষয় হইতে ইন্দ্রিয়গুলিকে প্রতিনিবৃত্ত করিয়া অন্তর্মুখী করা

 () ধারণা: কোন এক বিশেষ স্থানে (ভূ মধ্যে বা হৃদপদ্মে) বা বিষয়ে (ভগবৎ মূর্তিতে বা শ্রীগুরু মুর্তিতে) মনকে কিছুক্ষণ স্থিরভাবে ধরিয়া রাখার নাম ধারণা

() ধ্যান: তৈলধারাবৎ অবিচ্ছিন্নভাবে শ্রীভগবৎ চিন্তা করাকে ধ্যান বলে

() সমাধি: মনকে সম্পূর্ণ নির্বিষয় করিয়া ভগবৎ চিন্তায় সম্পূর্ণরূপে নিঃশেষে ডুবিয়া যাওয়ার নাম
সমাধিইহা দুই প্রকার: ১.সবিকল্প ২.নির্বিকল্প

আরো পড়ুন:   নমস্কার কেন করা হয়?

Comments

Populer Post

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের, প্রবন্ধে সেকালের বাবুচরিত্র

‘সাগুদানা’ একাদশীতে খাবেন? না খাবেন না?

রাজা শান্তনু, সত্যবতী এবং ঋষি পরাশরের অবস্থা মহাভারতের প্রকৃতি বদলে দিয়েছে ।

উপবীত বা পৈতার মাহাত্ম্য , উপবীত বা পৈতা কাহাকে বলে?

বৃন্দাবন ত্যাগ করে চিরতরে মথুরায় গমনকালে শ্রীকৃষ্ণের বয়স কত ছিল- শাস্ত্রীয় রেফারেন্স

বাড়িতে শ্রী গণেশ ঠাকুরের প্রতিস্থাপন এবং কীভাবে বির্সজন করবেন, জেনে নিন সহজ পদ্ধতি