ষোড়শ সংস্কার, ব্রহ্মাণ্ড বা চতুর্দশ ভুবন, প্রধান নাড়ী ও নমস্কার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
ষোড়শ সংস্কার
মানুষের তথা জগতের কল্যাণের
জন্য ত্রিকালজ্ঞ ঋষিগণ হিন্দুর সমগ্র
জীবনধারাকে বিভিন্ন বিধি-নিষেধ ও
নিয়মাবলীর দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করে
গিয়েছেন। সেই
বিধি-নিয়মগুলিকে সংস্কার বলা হয়। তাঁরা
মানুষের সমগ্র জীবনকে ষোলভাগে
ভাগ করে তাকে ‘ষোড়শ
সংস্কার’ বলে অ্যাখায়িত করেছেন। সেইগুলি
হল-
(১) গর্ভাধান
(২) পুংসবন
(৩) সীমন্তোন্নয়ন
(৪) জাতকৰ্ম্ম
(৫) নামকরণ
(৬) নিষ্ক্রমণ
(৭) অন্নপ্রাশন
(৮) চূড়াকরণ
(৯) কর্ণবেধ
(১০) উপনয়ন
ব্রহ্মাণ্ড বা চতুর্দশ ভুবন
শাস্ত্র অনুযায়ী পৃথিবীর উপরে ৭টি লোক ও নিচে ৭টি লোক অবস্থিত। পৃথিবী ঠিক মাঝামাঝি অবস্থিত। একে বিশ্ব ব্রহ্মান্ড বা চতুর্দশ ভুবন বলা হয়ে থাকে।
ঊৰ্ধ সপ্তলোক
(১) ভূঃ – নরলোক
(২) ভুবঃ – পিতৃলোক
(৩) স্বঃ – স্বর্গলোক
(৪) মহঃ – ঋষিলোক
(৫) জনঃ – ঐ
(৬) তপঃ – ঐ
(৭) সত্যম্- ব্রহ্মলোক
নিম্ন সপ্তলোক
প্রধান নাড়ী
আমাদের বেঁচে
থাকার জন্য আবশ্যকীয় উপাদান হল অক্সিজেন। নাকের সাহায্যে আমরা শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া
সম্পন্ন করে থাকি। নাকে ২টি ছিদ্র থাকে, এদেরকে নাসারন্দ্র বলা হয়ে থাকে। আপনারা একটু
লক্ষ্য করলেই বুঝতে পরবেন আমাদের নাকের এই ছিদ্রপথ সব সময় সমভাবে সক্রিয় থাকে না। কখনো
বাম নাসারন্দ্র খোলা, কখনো ডান নাসারন্দ্র, কখনো বা উভয় নাসারন্দ্র খোলা থাকে। নাসারন্দ্রের
এই বৈচিত্রা আমাদের দেহতন্ত্রকে ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত করে।
মানুষের
শরীরে মেরুদণ্ডের মধ্যে ৩টি প্রধান
নাড়ী আছে— যথা:
(১)
ইড়া
– মেরুদণ্ডের মধ্যে বামিদকে অবস্থিত।
বাম নাকে নিঃশ্বাস বহিলে মন শান্ত
থাকে। এই
সময় পড়াশোনা ও সৃজনশীল কাজ ভাল হয়।
(২)
পিঙ্গলা
– মেরুদণ্ডের মধ্যে ডান দিকে
অবস্থিত। ডান নাকে নিঃশ্বাস
বহিলে মন চঞ্চল হয়। এই
সময় পরিশ্রমের কাজ ভাল হয়।
(৩)
সুষুম্না
– মেরুদণ্ডের মধ্যে মাঝখানে।
উভয় নাকে নিঃশ্বাস বহিলে
মন শান্ত ও ধীর
স্থির হয়। এই
সময় ধ্যান-জপ, সাধন-ভজন ভাল হয়।
নমস্কার
সনাতনধর্ম মতে
একে অপরকে ছোট-বড়, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নমস্কার করার বিধান রয়েছে। অথচ আজকাল বিভিন্ন
মতের অনুসারিদের মধ্যে ভিন্নতা দেখা যায়। হরেকৃষ্ণ, জয় নিতাই, রাঁধে-রাঁধে, জয় গুরু
ইত্যাদি বলে সংবোধন করতে দেথা যায় যা সম্পূর্ণ অশাস্ত্রীয়। বেদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে,
হে মানব! তোমরা একে অপরকে করজোড়ে প্রণাম করিবে।
অতঃপর নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করিবে।
ওঁ নমঃ শম্ভবায় চ ময়োভবায় চ
নমঃ শঙ্করায় চ ময়স্করায় চ
নমঃ শিবায় চ শিবরায় চ।। যজুৰ্বেদ, ১৬/৪১
অর্থ – আনন্দস্বরূপ, সুখ-স্বরূপ, শান্তি-স্বরূপ মঙ্গলময় অশেষ কল্যাণ-নিধান জগদীশ্বরকে নমস্কার করি।
তাই আমাদের উচিত
নিজ ধর্মের প্রতি আস্থা রেখে সকল অশাস্ত্রীয় আচারগুলোকে বর্জন করে শাস্ত্রীয় আচারণ
অনুসরণ করা। শ্রীকৃষ্ণ কখনো বলেননি তোমরা সাক্ষাৎকারের সময় হরেকৃষ্ণ বল, শ্রীচৈতন্য
মহাপ্রভূ কখনো বলেননি জয় নিতাই বল। অথচ আজ আমরা তার ফলোয়ার হয়ে তাদের নির্দেশিত পথ
অনুসরণ করছি না। হয়তো, আমরা নিজেদের অজান্তে এই ভুলগুলো করে চলেছি।আর কতোকাল এই অশাস্ত্রীয়
পথে চলব? সময় এসেছে শোধরানোর, আপনার শুদ্ধ ধর্মাচারই দিতে পারে আগামীতে শুদ্ধ সমাজ।
আরো পড়ুন: নমস্কার কেন করা হয়?
স্বামী শ্রীপ্রণবানন্দ মহারাজ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী ও ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ
আরতি তত্ত্ব বা আরতি-মাহাত্ম্য ও আরতির শাস্ত্রীয় বিধি
ভাইভোঁটার শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা ও উৎপত্তি ইতিহাস
নিষিদ্দ লেবানন ও লিবিয়া সম্পর্কে লোমহর্ষক তথ্য
Comments
Post a Comment