কলিযুগে সংঘ শক্তি: চৈতন্য মহাপ্রভু

শাস্ত্রানুসারে বর্তমান সময়কে কলিযুগ বলা হয়। শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু কলিযুগের অবতার। যিনি হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্রের প্রবক্তা। চৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন, “সঙ্ঘ শক্তি কলৌ যুগে ” । তিনি তৎকালীন সময়ে অত্যাচারী চাঁদ-কাজীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে মশাল মিছিল করেন। আমরা হয়ত অনেকেই জানি এবং বিশ্বাস করি কলিযুগে টিকে থাকতে হলে এবং আসুরিক শক্তিকে প্রতিহত করতে হলে সংঘ শক্তির বিকল্প নেই। তবুও আমরা সংঘবদ্ধ হতে পারছি না। কিন্তু কেন?


সঙ্ঘবদ্ধতার প্রার্থনা মন্ত্র:

সংগচ্ছদ্ধং সং বদধ্বং, সং বো মনাংসি জানতাম।

দেবা ভাগাং যথা পূর্বে, সঞ্জানানা উপিসতে।।

সমানো মন্ত্রঃ সমিতিঃ সমানী, সমানং মনঃ সহ চিমেখম।

সমানাং মন্ত্রমাভিমন্ত্ৰমে বঃ, সমানেন বো হবিষা জুহাহোমি।।

সমানী বা আকৃতিঃ সমানা হৃদয়ানি বঃ।

সমানমন্ত বো মানো যথা বঃ সুসহাসতি।।-ঋগ্বেদ,১০/১৯১/৩-৩

অর্থ:

তোমারা সকলে একসঙ্গে মিলিয়া মিশিয়া চল, একসঙ্গে মিলিয়া আলোচনা কর, তোমাদের সকলের মন উত্তম সংস্কারযুক্ত হউক। পূর্ববর্তী জ্ঞানী ব্যক্তিগণ যেরূপ সম্মিলিত হইয়া কর্তব্যকর্মসমূহ সম্পাদন করিয়া গিয়াছেন, তোমরাও সেইরূপ কর।

তোমাদের সকলের মত এক হউক, তোমাদের সকলের মিলনভূমি এক হউক, তোমাদের মন এক হউক, তোমাদের চিত্ত একত্র সম্মিলিত হউক। তোমাদের সকলকে আমি একই মন্ত্রে সংযুক্ত করিতেছি, তোমাদের সকলকে একই প্রকারের অন্ন ও উপভোগ প্রদান করিতেছি।

তোমাদের সকলের সঙ্কল্প বা লক্ষ্য সমান হউক, তোমাদের সকলের হৃদয় সমান হউক, তোমাদের সকলের মন এক হউক, যাহাতে তোমাদের সকলের পরম ঐক্য হয়তাহাই হউক।


শ্রীমদ্ভগবতগীতায় শ্রীভগবান নিষ্কাম কর্মের কথা বলেছেন। আমরা কী নিষ্কামী হতে পেরেছি? স্বামী প্রণবানন্দজী বলেছে, অন্যের জন্য বেঁচে থাকায় প্রকৃত বাঁচা। অথচ সেই আমরাই আজ আত্মকেন্দ্রীক, লোভী, অসঙ্ঘবদ্ধ ও স্বার্থপর একটি জাতি। হিন্দু মানেই যেন হিংসুক। প্রতিবেশীর দুইতলা বাড়ী উঠলে, তার ছেলে-মেয়ে ভাল রেজাল্ট করলে হিংসায় আমাদের গা জ্বলে।এটা ভাবিনা সে আমার স্বজাতির। কোথাও অন্যায় দেখলে আমরা প্রতিবাদ করতে ভয় পাই। অথচ আমরা সেই জাতি যারা একহাতে তলোয়ার আরেক হাতে আসমানী কিতাব হাতে আসুরিক শাসনের মত বর্বরতার যুগেও ধর্মান্তরিত হইনি।


আমরা হলাম সেই সূর্য সন্তান যারা দারিদ্রের মাঝে জিবন অতিবাহিত করেছি অথচ পশ্চিমাদের লোভে পড়ে সত্য ও চিরন্তন সনাতন ধর্মকে ত্যাগ করিনি। কোথায় গেল আমাদের বীরত্ব? পাশের বাসায় যখন সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের কতিপয় জানোয়ারা এসে অত্যাচার চালায়, আমরা চুপ থাকি। এটা ভুলে যায়, প্রতিবেশীর ঘরে আগুন লাগলে সেই আগুন আমাদের ঘরে আসতে কতোক্ষণ। এখনো সময় শেষ হয়ে যাযনি, আসুন সঙ্ঘবদ্ধ হই। 

পিতা-মাতাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই- অন্যের বিপদের সময় আপনার সন্তানকে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেননি, কুক্ষিগত করে রেখেছেন তাহলে আপনার বিপদের সময় অন্যেরা আসবে কেন? সুতরাং অন্যায় তো অন্যায় সেটা আমার সাথে হোক কিংবা অন্যের সাথে আপনার অবস্থান অনুযায়ী প্রতিবাদ হওয়া চাই। অনেকে বলেন বাড়ী খেয়ে বনের মহিষ তাড়ানোর কি দরকার? অবশ্যই দরকার আছে, আজ বনের মহিষ না তাড়লে ঔ মহিষ একদিন আঙ্গীনায় ঢুকে সকলের ক্ষতি করবে। সনাতন সমাজে জাতপাতের একটি বিরাট প্রভাব দেখা যায় বিবাহের ক্ষেত্রে।যদি ভিন্ন বর্ণে দু’জন ছেলে-মেয়ে ভালবেসে একে অপরকে বিবাহ করে পরিবার সেটা মেনে নেয় না। আবার ছেলে/মেয়ের অভিভাবকের মধ্যে যিনি প্রভাবশালী হন তিনি তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করতে মরীয়া হয়ে ওঠেন। মামলা-মোকদ্দমা থেকে শুরু করে মাস্তান ভাড়া করে হেনস্তা করার মত ঘটনার নজিরও রয়েছে। অনেক সময় হত্যা, আত্মহত্যা ও জেল-জরিমানার মত নির্মম সিদ্ধান্তের পাশাকলে নিভে যায় অনেকের ভবিষ্যৎ।অথচ একই ঘটনা যদি ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ছেলে বা মেয়ের সাথে ঘটে তখন ঔ সকল অভিভাবক মুখে কুলুপ মেরে বসে থাকেন। বাড়ীর আঙ্গীনা গোবর জল দিয়ে লেপে মেয়ে/ছেলেকে ত্যাজ্য ও নিজেকে নপুংশক বলে ঘোষণা দিতে তখন লজ্জাবোধ করিনা। তখন আমরা একথা ভুলে যায় শ্রী রাম চন্দ্র রাবনকে পরাজিত করে সীতা মাতাকে উদ্ধার করেছিলেন।আপনার সন্তনের আবেগের বসে করা ভুল শুধরে তাকে নতুন জীবন দেয়া অভিভাবক হিসাবে আপনার দায়িত্ব।আর যদি এই দিনটার সম্মুখীন না হতে চান কখনো, আপনার সন্তানকে ধর্মীয় শিক্ষা দিন। এক্ষেত্রে নিজের ধর্মীয় জ্ঞান কম বা সময় না থাকলে যিনি জানেন তার দ্বারস্থ হোন, প্রয়োজনে তাকে  অর্থ দিন। ভুলে যাবেন না আপনার সন্তান আপনার ভবিষ্যৎ, তার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করে রেখে যা্ওযার চেয়ে তাকে সুযোগ্য মানুষ রূপে তৈরি করা যাওয়া আপনার গুরু দায়িত্ব। 


আরো পড়ুন: 

           ভগবান শঙ্করাচাৰ্য্য (সংক্ষিপ্ত জীবনী) 

          স্বামী শ্রীপ্রণবানন্দ মহারাজ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী ও ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ  

          ভাইভোঁটার শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা ও উৎপত্তি ইতিহাস

           আরতি তত্ত্ব বা আরতি-মাহাত্ম্য ও আরতির শাস্ত্রীয় বিধি 

           নমস্কার কেন করা হয়?

Comments

Populer Post

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের, প্রবন্ধে সেকালের বাবুচরিত্র

‘সাগুদানা’ একাদশীতে খাবেন? না খাবেন না?

রাজা শান্তনু, সত্যবতী এবং ঋষি পরাশরের অবস্থা মহাভারতের প্রকৃতি বদলে দিয়েছে ।

উপবীত বা পৈতার মাহাত্ম্য , উপবীত বা পৈতা কাহাকে বলে?

বৃন্দাবন ত্যাগ করে চিরতরে মথুরায় গমনকালে শ্রীকৃষ্ণের বয়স কত ছিল- শাস্ত্রীয় রেফারেন্স

বাড়িতে শ্রী গণেশ ঠাকুরের প্রতিস্থাপন এবং কীভাবে বির্সজন করবেন, জেনে নিন সহজ পদ্ধতি