স্বামী শ্রীপ্রণবানন্দ মহারাজ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী ও ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ
এই সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা—অলৌকিক মহাতপঃ শক্তিশালী যুগাচাৰ্য্য শ্রীশ্রীমৎ স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজ। ১৮৯৬ খ্রীষ্টাব্দের ২৯শে জানুয়ারী কলিযুগাদ্যা পুণ্যময়ী মাঘীপূর্ণিমা তিথিতে সাক্ষাৎ শিবের বরে শিবাবতাররূপে এই ক্ষণজন্মা মহাপুরুষের শুভ আবির্ভাব। জন্মস্থান—বর্তমান বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলার বাজিতপুর গ্রাম। পিতা—শ্রীবিষ্ণুচরণ ভুইয়া, মাতা—শ্ৰীমতী সারদাদেবী। আজন্ম কঠোর তপস্বী ব্রহ্মচারী বিনোদ (বাল্যনাম) ১৯১৩ খ্রীষ্টাব্দে গরোক্ষপুরে (উত্তর প্রদেশ) মহাযোগী বাবা গম্ভীরনাথজীর নিকট দীক্ষাগ্রহণ করে কঠোরতর সাধনায় নিমগ্ন হন এবং ১৯১৬ খ্রীষ্টাব্দের শ্রীশ্রী মাঘীপূর্ণিমায় বাজিতপুর সিদ্ধপীঠে মহাসিদ্ধি লাভ করেন।
সিদ্ধিলাভের পর তাঁর শ্রীমুখের প্রথম মহাবাণী—
“এ যুগ মহাজাগরণের যুগ, এ যুগ মহাসমন্বয়ের যুগ, এ যুগ মহামিলনের যুগ, এ যুগ মহামুক্তির যুগ।”
১৯১৭ খ্রীষ্টাব্দের শ্রীশ্রী মাঘীপূর্ণিমার শুভদিনে বাজিতপুর সিদ্ধপীঠে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন—এই বিখ্যাত ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ। ১৯২৪ খ্রীঃ-এ প্রয়াগধামে কুম্ভমেলায় শ্রীমৎ স্বামী গেবিন্দানন্দ গিরিজীর নিকট সন্ন্যাস গ্রহণপূর্বক তিনি আচার্য্য স্বামী প্রণবানন্দ’ নাম গ্রহণ করেন। তাঁহার তপঃশক্তির আকর্ষণে শুদ্ধ পবিত্ৰ-চরিত্র যুবকবৃন্দ তাঁর সন্নিকটে এসে “আত্মননা মাক্ষোর্থং জগদ্বিতীয় চ”—এই মহান আদর্শে উদ্বুদ্ধ হইয়া সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করেন। তাদেরকে নিয়েই এই মহাসঙ্ঘ গড়ে ওঠে।
ক্রমে তাঁর জাতিগঠন ও ধৰ্ম্মান্দোলনকে করেন বহুমখী । ধর্মপ্রচার, তীর্থসংস্কার, শিক্ষাবিস্তার, জনসেবা, হিন্দু মিলন-মন্দির ও রক্ষীদল গঠন, আদিবাসী ও অনুন্নতোন্নয়ন, অস্পশ্যতা নিবারণ, শুদ্ধি আন্দোলন, বর্হিভারতে ভারতীয় সংস্কৃতি প্রচার প্রভৃতি বিভিন্ন গঠনমূলক কৰ্ম্মে তিনি শত শত সন্ন্যাসী, ব্রহ্মচারী ও কর্মীগণকে নিয়োগ করেন। ধর্মপ্রচারের জন্য ৮-১০টি প্রচার দল তৈরী করে সমগ্র দেশে গ্রামে গ্রামে, শহরে শহরে ধৰ্ম্ম প্রচারের ব্যবস্থা করেন। গয়া, কাশী, পুরী, প্রয়াগ, বৃন্দাবন, হরিদ্বার প্রভৃতি তীর্থক্ষেত্রে অত্যাচারী পাণ্ডাদের দমনপূর্বক পুণ্যার্থী তীর্থযাত্রীদের নিরাপদ আশ্রয় ও স্বল্পব্যয়ে তীর্থকৃত্যের সুব্যবস্থা করেন। শিক্ষাবিস্তারের জন্য অবৈতনিক প্রাথমিক ও নৈশ বিদ্যালয়, আদর্শ ছাত্রাবাস প্রভৃতি স্থাপন করে প্রকৃত মানুষ গঠনের শিক্ষা দিয়ে গেছেন। বন্যায়-প্লাবনে, ঝড়ে-ঝায়, দুর্ভিক্ষে-ভূমিকম্পে অগ্নিকাণ্ডে, যুদ্ধে-বিপ্লবে এবং কুম্ভমেলা, গঙ্গাসাগর মেলা প্রভৃতি বিরাট বিরাট ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নির্বিশেষে যে কোন আত্ত, বিপন্ন নরনারীর সর্বপ্রকার সেবার ব্যবস্থা করেছেন।
১৯৩৪ খৃঃ এ সঙ্ঘনেতা আচার্য্য বিশাল হিন্দুজাতিকে এক ধৰ্ম্মসূত্রে গেঁথে ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী হিন্দুজাতি গঠনপূরক ভারতের জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় ব্রতী হন।সেজন্য তিনি সমগ্র দেশময় হিন্দু মিলন মন্দির ও রক্ষীদল গঠন” আন্দোলন আরম্ভ করেন। তিনি বলতেন, “মিলন হয় সমানে সমানে, সবলে সবলে, সবলে দুর্বলে কখনও মিলন হয় না।”
দেশের লক্ষ লক্ষ আদিবাসী ও অনুন্নত শ্রেণীর উন্নয়নের জন্য তিনি তার সন্তানদের ডাক দিয়ে বললেন—“এই পতিত জাতিকে উদ্ধারের জন্য তোমাদের সমগ্র শক্তি নিয়োগ করতে হবে। হীন-অন্ত্যজ জাতিকে কোলে তুলে নিতে হবে। তোমরা নিত্য-শুদ্ধ-মুক্ত-স্বভাব নিয়ে পরিত্রাণ কর— পতিতকে, রক্ষা কর¬— বিপন্নকে, আশ্রয় দাও—নিরাশ্রয়কে, শান্তি-সুখ দাও—সন্তপ্তকে।” বিদেশী ও বিধর্মীদের অত্যাচারে, প্রলোভনে এবং ছলে-বলেকৌশলে যে সমস্ত হিন্দু ভাই-বোন ধর্মান্তরিত হয়েছে, তাদেরকে আইনতঃ ও শাস্ত্ৰতঃ শুদ্ধি করে পুনরায় স্বধর্মে ফিরে আনার সুব্যবস্থা করেন।
তিনি মহা আশ্বাস দান করে বলেছেন—“কঠোর তপঃসাধনায় এই দেহকে আশ্রয় করে যে মহাশক্তির বিকাশ হয়েছে, তাহা সমগ্র মানবজাতিকে মহামুক্তিদানে সমর্থ। যাও, তোমরা জগতের ঘরে ঘরে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলকে এই মহাশক্তির সংস্পর্শে আনয়ন কর। এই সঙ্ঘকে সাধারণ মঠ বা আশ্রম বলে মনে করবে না— এটা ঐশী শক্তি সম্পন্ন। এর মধ্য দিয়েই জগতের মহাকল্যাণ সাধিত হবে।”
সুতরাং এই সঙ্ঘের আশ্রয় গ্রহণ করে সঙ্ঘনেতা প্রণবানন্দজীর আদর্শে আত্মসমর্পণ করলেই মানব অভীষ্ট পরমপদ ও পরম শান্তি প্রাপ্ত হবে।
আরো পড়ুন: ভগবান শঙ্করাচাৰ্য্য (সংক্ষিপ্ত জীবনী)
আরতি তত্ত্ব বা আরতি-মাহাত্ম্য ও আরতির শাস্ত্রীয় বিধি
ভাইভোঁটার শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা ও উৎপত্তি ইতিহাস
Comments
Post a Comment