মস্তকে শিখা ধারণ করব কেন?
—জ্ঞানাগ্নি শিখাই হইল আসল শিখা। অর্থাৎ আমাকে আত্মজ্ঞান, তত্ত্বজ্ঞান বা ব্রহ্মজ্ঞান এই জীবনেই লাভ করিতে হইবে—ইহা স্মরণ রাখিবার জন্যই আমাদের শিখা ধারণ করা।
তাই এখানে শিখা সম্পর্কিত বিশেষত শাস্ত্র প্রমাণ উল্লেখ করা হল।
সর্বাপেক্ষা প্রাচীন
বৈদিক সংস্কৃতির অন্তর্গত দশবিধ সংস্কারের অন্যতম হলো চূড়াকরণ বা শিখাধারণ। বৈদিক
সংস্কৃতি অনুসারে, চূড়াকরণ ও উপনয়ন তথা দীক্ষাকালে মস্তক মুণ্ডন মস্তক এর পেছন দিকে
মধ্যভাগে একগুচ্ছ কেশ রাখতে হয়। এই কেশগুচ্ছকে বলা হয় শিখা। আবার, ভগবৎ-চেতনা দান
করে বলে একে চৈতন্য বলা হয়।
গৌড়ীয় বৈষ্ণব অভিধানে শ্রীধর স্বামী ব্যাখ্যা করেছেন, শিখা হচ্ছে মস্তক মধ্যস্থ কেশপাশ। বৈদিক সংস্কৃতির অঙ্গ হওয়া সত্ত্বেও কলিযুগের প্রভাবে অপসংস্কৃতি চর্চায় উৎসুক মনুষ্য আজ এসম্পর্কে কোন ধারণাই রাখে না। সেকারণে শাস্ত্রজ্ঞানের অভাবে তথা অজ্ঞতাহেতু একে টিকি-এন্টেনা বলে কাউকে উপহাস করতে দেখা যায়। আবার কেউ কেউ মনে করে থাকেন এটি অশাস্ত্রীয়।
বেদ:
শিখিভ্যঃ স্বাহা।
অর্থাৎ, শিখাধারীদের
কল্যাণ হোক। অথর্ববেদ (১৯.২২.১৫)
অতএব, বৈদিক শাস্ত্রে
বহু প্রমাণ থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মাণ হয় যে, পরশ্রীকাতর ও অজ্ঞলোকের ভ্রান্ত কথার দ্বারা
বিভ্রান্ত না হয়ে, বৈদিক সংস্কৃতির বিশেষ অঙ্গরূপ দ্বিজাতির বিশেষত ব্রাহ্মণ-বৈষ্ণবগণের
শিখাধারণ স্থান-কাল-পরিস্থিতি অনুসারে অবশ্য কর্তব্য।
মহাভারত:
শিখাযজ্ঞোপবীতা যে সন্ধ্যাং যে চাপ্যুপাসতে।।
নষ্ট্রদূষ্কৃতকর্ম্মণো ব্রহ্মলোকং ব্রজস্তি
তে।। (মহাভারত, অশ্বমেধিকপর্ব
১১৯/২,৫)
অর্থাৎ, যাদের
সর্বদা শিখা ও যজ্ঞাপবীত থাকে, যারা প্রত্যহ সন্ধ্যা করেন, যারা জপযজ্ঞপরায়ণ হন, এভাবে
যাদের পাপ দগ্ধ হইয়া যায়, সেই পাপবিহীন ব্রাহ্মণেরা ব্রহ্মলোকে গমন করেন।
পুরাণ:
ব্রাহ্মণৈশ্চ বিশেষেণ বৈষ্ণবৈশ্চ বিশেষতঃ।
উপবীতং শিখা যদ্বচ্চক্রং লাঞ্ছনসংযুতম।। (স্কন্দপুরাণ, বিষ্ণুখণ্ডে-মার্গশীর্ষমাসমমাহাত্মম্ ৩/৫৭)
"অর্থাৎঃ-বিশেষত ব্রাহ্মণ-বৈষ্ণব গনের পক্ষে যেরূপ উপবীত ও শিখা নৃত্য ধারণীয়, তদ্রপ নিত্য চক্রচিহ্ন যুক্ত হবেন।"
শিখায়াং
শ্ৰীধরং ন্যস্য শিখাধঃ শ্রীকরন্তথা। (পদ্মপুরাণ,
উত্তরখণ্ড, ৭৮/১৭)
অর্থাৎঃ-
"শিখায় শ্রীধর, শিখানিম্নে শ্রীকর বিন্যাস করিবে।
মনুসংহিতা:
চূড়াকর্ম
দ্বিজাতীনাং সর্বেষামেব
ধর্মতঃ।
প্রথমেহব্দে
তৃতীয়ে বা কর্তব্যং শ্রুতিচোদনাৎ।। (মনুসংহিতা-২/৩৫)
অর্থাৎঃ-
চূড়া শব্দের অর্থ শিখা
(এক গুচ্ছ চুল) ।
তার জন্য যে কর্ম,
তাকে বলা হয় চূড়াকর্ম। মাথার
বিশেষ বিশেষ
জায়গায় চুল কেটে বিশেষ
রকমের বিন্যাস (Tufts of hair) করে চুল রাখা
হয়। এর
নাম চুড়াকর্ম। এই
সংস্কার প্রথম বা তৃতীয়
বৎসরে কর্তব্য; গ্রহসন্নিবেশকে প্রশস্ত করার জন্য এই
বকম বিকল্প ব্যবস্থার কথা
বলা হয়।
অতএব,
বৈদিক শাস্ত্রে বহু প্রমাণ থেকে
স্পষ্ট প্রতীয়মাণ হয় যে, পরশ্রীকাতর
ও অজ্ঞলোকের ভ্রান্ত কথার দ্বারা বিভ্রান্ত
না হয়ে, বৈদিক সংস্কৃতির
বিশেষ অঙ্গরূপ দ্বিজাতির বিশেষত ব্রাহ্মণ-বৈষ্ণবগণের
শিখাধারণ স্থান-কাল-পরিস্থিতি
অনুসারে অবশ্য কর্তব্য।
আরো পড়ুন:
Comments
Post a Comment