গঙ্গা স্নানের মাহাত্ম্য ও তার ফলাফল, কবে, কোন স্নান করা উচিত ?.... শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা

 গঙ্গা হল পুণ্যদায়িনী। এটা আমরা সকলেই জানি। তাই আমরা সকলেই গঙ্গা স্নান করে থাকি পুণ্য লাভের আশায়। আবার বাঙালির সমস্ত পূজোতে গঙ্গা জল, গঙ্গা মাটি অবশ্য প্রয়োজনীয়। আর কিছু বিশেষ বিশেষ তিথিতে যদি গঙ্গা স্নান করা যায় তাহলে অনেক পুণ্য সঞ্চয় করা যায়। আসুন জেনে নি সেই বিশেষ তিথিতে গঙ্গাস্নানের মাহাত্ম্য। আমাদের প্রাচীন পুরাণে গঙ্গাস্নানের মাহাত্ম্যের কথা অনেক লেখা আছে। এমনকি গঙ্গার মাহাত্ম্যর কথা ভগবান শিব বলেছিলেন পার্বতীকে। আসুন তাহলে জেনে নিন কোন কোন তিথিতে গঙ্গা স্নান করলে আপনার পুণ্য সঞ্চয় হবে।

. দশহরা স্নান ফল - জ্যৈষ্ঠ মাসের মঙ্গলবার শুক্লা দশমী তিথিতে যদি দশহরা পড়ে তাহলে সেদিন গঙ্গা স্নান করলে দশ জন্মের অর্জন করা সব পাপ ক্ষয় হয় আর অযুত অশ্বমেধ যজ্ঞের যে ফল তা লাভ করা যায় এই যোগ ভাগিরথ দশহরা নামে পরিচিত

. বারুনী স্নান - স্কন্দ পুরাণে লেখা আছে যে চৈত্রমাসের কৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে শতভিষা নক্ষত্র যোগ হলে সেই তিথি বারুণী নামে পরিচিত এই তিথিতে স্নান করলে বহুশত সূর্যগ্রহনের জন্য গঙ্গাস্নানের যে ফল সেই ফল লাভ করা যায়

. চূড়ামণি যোগে স্নান - রবিবারে সূর্যগ্রহন এবং সোমবারে চন্দ্রগ্রহন হলে চূড়ামনি যোগ হয় এই যোগে গঙ্গাস্নান করলে অনন্ত গঙ্গাস্নানের মতো ফল লাভ হয়

. গ্রহন স্নান - গ্রহন চলাকালীন যে স্নান তাকে গ্রহন স্নান বলা হায় আর গ্রহন শেষের যে স্নান তাকে বলা হয় মুক্তিস্নান বা মোক্ষস্নান পুরাণে আছে সূর্যগ্রহনকালে হরিদ্বারে গঙ্গা যেমন পুন্যদায়িনি তেমন প্রয়াগ, পুষ্কর, গয়া এবং কুরুক্ষেত্রেও পুন্যপ্রদ

. গোবিন্দ দ্বাদশী স্নানফল- ফাল্গুন মাসের শুক্লপক্ষের যে দ্বাদশী সেটি গোবিন্দ দ্বাদশী নামে পরিচিত এই দ্বাদশী মহাপাপ নাশিনী এই তিথিতে গঙ্গাস্নান করলে মহাপাপও নাশ হয়

. ব্রহ্মপুত্র স্নানফল- পুনর্বসু নক্ষত্র বৃষলগ্ন যদি চৈত্র মাসের শুক্লা অষ্টমীতে যোগ হয়, এই যোগে ব্রহ্মপুত্রে স্নান করলে সকল পাপ থেকে মুক্তি লাভ হয় এবং সমস্ত তীর্থস্থানের ফল লাভ হয়

. নারায়ণীযোগ স্নানফল- পৌষমাসের অমাবস্যা তিথিতে মূলানক্ষত্র যোগ হলে হয় নারায়ণী যোগ এই যোগে করতোয়াতে স্নান করলে তিন কোটি কুল পর্যন্ত উদ্ধার হয়ে যায়

 

এগুলি হল গঙ্গা স্নানের কি কি পুণ্যফল লাভ হয় তার কথা এবার আপনাদের বলব অন্যান্য মাহাত্ম্যের কথা যেমন গঙ্গা মন্ত্র উচ্চারন করে স্নান করলে সমস্ত রকম পাপ থেকে মুক্তি লাভ হয় আর পাপীরা "গঙ্গা গঙ্গা" উচ্চারন করে স্নান করলে তাদের সমস্ত পাপ ধুয়ে ফেলতে পারে তার স্থান হয় বৈকুন্ঠে গঙ্গাতীরে ন্যায় বা অন্যায় প্রাণত্যাগকারী ব্যাক্তি তার স্বর্গলোক প্রাপ্ত হয়



শ্রী শ্রী গঙ্গা দেবীর প্রণাম মন্ত্র

সদ্যঃ পাতকসংহন্ত্রী সদ্যোদুঃখবিনাশিনী

 সুখদা মোক্ষদা গঙ্গা গঙ্গৈব পরমা গতিঃ।।

অর্থঃ যিনি তত্ক্ষণাৎ পাপ হরণ করেন, দুঃখ বিনাশ করেন, সুখদাত্রী মোক্ষদাত্রী গঙ্গা, সেই গঙ্গাই আমার পরম গতি


আরো পড়ুন:   নমস্কার কেন করা হয়?

                     স্বামী শ্রীপ্রণবানন্দ মহারাজ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী ও ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ

                     আরতি তত্ত্ব বা আরতি-মাহাত্ম্য ও আরতির শাস্ত্রীয় বিধি 

                     ভাইভোঁটার শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা ও উৎপত্তি ইতিহাস

                     কলিযুগে সংঘ শক্তি

                     নিষিদ্দ লেবানন ও লিবিয়া সম্পর্কে লোমহর্ষক তথ্য


Comments

Populer Post

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের, প্রবন্ধে সেকালের বাবুচরিত্র

‘সাগুদানা’ একাদশীতে খাবেন? না খাবেন না?

রাজা শান্তনু, সত্যবতী এবং ঋষি পরাশরের অবস্থা মহাভারতের প্রকৃতি বদলে দিয়েছে ।

উপবীত বা পৈতার মাহাত্ম্য , উপবীত বা পৈতা কাহাকে বলে?

বৃন্দাবন ত্যাগ করে চিরতরে মথুরায় গমনকালে শ্রীকৃষ্ণের বয়স কত ছিল- শাস্ত্রীয় রেফারেন্স

বাড়িতে শ্রী গণেশ ঠাকুরের প্রতিস্থাপন এবং কীভাবে বির্সজন করবেন, জেনে নিন সহজ পদ্ধতি