পূজ্যপাদ শ্রীমৎ স্বামী অদ্বৈতানন্দজী মহারাজের সংক্ষিপ্ত জীবনী
ভগবান আচার্য্যদেবের বাক
অংশে এই শ্রেষ্ঠ পার্ষদের
শুভ আবির্ভাব।
ইং ১৯০০ সালে বর্তমান
বাংলাদেশের যশোর জেলার ভেরচি
গ্রামে এক বিশিষ্ট ভক্ত
পরিবারে শ্রীমৎ স্বামীজীর শুভ
জন্ম। তাঁর
পূর্বাশ্রমের নাম ছিল শ্রীরাজেন্দ্র। অসাধারণ
মেধাবী শ্রীমৎ স্বামীজী ছাত্রাবস্থায়
সুফলাকাঠি হাইস্কুলে পড়াশুনা করতেন। প্রতি
বছরই প্রতিটি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করতেন। স্কুলের শিক্ষা শেষ করে
তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য খুলনা জেলার
দৌলতপুর হিন্দু একাডেমী কলেজে
ভর্তি হন। কিন্তু
১৯২১ খ্রীঃ অসহযোগ আন্দোলনে
কলেজ বন্ধ হলে স্বামীজী
শ্রীমৎ আচাৰ্য্যদেবের নেতৃত্বে সাতক্ষীরা দুর্ভিক্ষ সেবাকাৰ্য্যে যোগদান করেন।
১৯২২ খ্রীঃ বাজিতপুর সিদ্ধপীঠে
তিনি অন্যান্য সঙঘসন্তানদের সহিত আচাৰ্য্যদেবের হস্তে
ব্রহ্মচর্য্য সংস্কার এবং ১৯২৪ খ্রীঃ
মাঘীপূর্ণিমায় সন্ন্যাস সংস্কার লাভ করেন, তখন
তার নাম হয় “স্বামী
অদ্বৈতানন্দজী”।
প্রথমে
তিনি রাজশাহী ছাত্রাবাসের অধ্যক্ষরূপে বহু ছাত্রকে সঙ্ঘনেতার
পূত সংস্পর্শে নিয়ে আসেন।
বিদ্যার্থী গুরুপদ তারই প্রচেষ্টায়
স্বামী কৃষ্ণানন্দ রূপে আত্মপ্রকাশ করেন। শ্রীমৎ
স্বামীজী প্রথমে খুবই লাজুক
ছিলেন। কিন্তু
একদা ভগবান আচার্য্যদেব তাকে
বিশেষ আশীৰ্বাদ ও শক্তি সঞ্চার
করেন। সেই
আশীর্বাদের প্রভাবে শ্রীগুরু কৃপায়—মূকং করোতি
বাচালং ...... এই শাস্ত্র বাক্যের
উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলেন পূজ্যপাদ শ্রীমৎ
স্বামীজী। পরবর্তীকালে
শ্রীমৎ স্বামীজী উত্তরে হিমালয় হতে
দক্ষিণে কন্যাকুমারী, পশ্চিমে গুজরাট, সিন্ধু হতে পূর্বে
ব্রহ্মদেশ পর্যন্ত সমগ্র ভারতবর্ষ ভ্রমণ
করেন। বছরের
পর বছর ধরে বাংলা,
ইংরেজী, হিন্দী, গুজরাটী প্রভৃতি ভাষায় সঙ্ঘনেতার বাণী
এবং হিন্দু ধর্ম ও
ভারতীয় সংস্কৃতির আদর্শ নির্ভীকভাবে প্রচার করেছেন। শুধু
তাই নয় তিনি সুদূর
ব্রহ্মদেশ, রেঙ্গুন, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশেও প্রচারকার্যে গিয়েছেন।
১৯৪৮-১৯৫০ খ্রীঃ আচাৰ্য্যদেবের
উত্তরকালে বহির্ভারতে যে দুইটি প্রচার
পার্টি গেছেন, পূজ্যপাদ শ্রীমৎ
স্বামীজী ছিলেন তার নেতা। ইঁনারা
সারা পৃথিবীতে হিন্দু ধর্মের বিজয়
বৈজয়ন্তী উড্ডীন করেন।
আজ বহির্ভারতে আমেরিকা, কানাডা, নিউইয়র্ক, শিকাগো, গায়েনা, ত্রিনিদাদ, লণ্ডন প্রভৃতি স্থানে
সঙেঘর যে সমস্ত শাখা
গডিয়া উঠছে তা শ্রীমৎ
স্বামীজী এবং পূজ্য শ্রীমৎ
স্বাদ পর্ণানন্দজীর বিশেষ অবদান।
শ্রীমৎ স্বামীজীর প্রচেষ্টায় আমেদাবাদ সুরাট, হায়দ্রাবাদ-এ
সঙেঘর স্থায়ী আশ্রম প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
১৯৬৯ খ্রীঃ শ্রীমৎ স্বামীজী
সঙ্ঘের প্রধান সম্পাদক হন। আমৃত্যু
তিনি ঐ পদে পূর্ণ
দায়িত্ব নিয়ে মৰ্য্যাদার সঙ্গে
পালন করেছেন। শেষ
জীবনে শ্রীমৎ স্বামীজী অনেকগুলি
পুস্তক রচনা করে সঙেঘর
সাহিত্য ভাণ্ডার পূর্ণ করেছেন।
তাঁর লেখা শ্রীশ্রীগীতার সহজ
ভাষ্য বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
স্বামীজীর
জীবনযাত্রা ছিল সরল ও
অনাড়ম্বর। এতবড়
বিশ্ববিখ্যাত ধর্মপ্রবক্তা হয়েও তাঁর মনে
কোন অহঙ্কার ছিল না।
১৯৭৭ খ্রীঃ ৮ই সেপ্টেম্বর
রাত্রি ৮-৩০টায় পূজ্যপাদ
শ্রীমৎ স্বামীজী কলিকাতার বালিগঞ্জে সঙেঘর প্রধান কার্যালয়ে
সজ্ঞানে। শ্রীগুরুচরণে
৭৭ বৎসর বয়সে চিরবিশ্রাম
লাভ করেন।
তাঁর
শ্রীচরণে সহস্র কোটি প্রণাম।
আরো পড়ুন:
স্বামী শ্রীপ্রণবানন্দ মহারাজ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী ও ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ
পরম পূজ্যপাদ শ্রীমৎ স্বামী সচ্চিদানন্দজী মহারাজের সংক্ষিপ্ত জীবনী
Comments
Post a Comment