পরম পূজ্যপাদ শ্রীমৎ স্বামী সচ্চিদানন্দজী মহারাজের সংক্ষিপ্ত জীবনী
শ্রীভগবান গীতায় বলেছেন—“যখনই জগতে ধৰ্ম্মের গ্লানি ও অধৰ্ম্মের প্রাদুর্ভাব হয়, তখনই আমি ধরাধামে অবতীর্ণ হই।” শ্রীভগবান যখন এই মর্ত্যধামে নেমে আসেন তখন তার লীলাকাৰ্য্যের সহায়তার জন্য স্বর্গের দেবতারাও তাঁর সঙ্গে জগতে অবতরণ করেন।
বর্তমান যুগে যখন ধর্মের ঘোর অবনতি ও অধৰ্ম্মের প্রভাব বৃদ্ধি হয়, তখনই শ্রীভগবান তার প্রতিজ্ঞা রক্ষার জন্য পুনরায় এই জগতে অবতীর্ণ হয়েছেন। তিনি হচ্ছেন—ভারত সেবাশ্রম সঙেঘর মহান্ প্রতিষ্ঠাতা জগদ্গুরু আচার্য্য শ্রীমৎ স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজ। সাক্ষাৎ শিবের বরে শিবাবতাররূপে ১৮৯৬ খ্রীঃ পুণ্যময়ী মাঘীপূর্ণিমা তিথিতে বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার (মাদারিপুর) বাজিতপুর গ্রামে তাঁর শুভ আবির্ভাব। তার পূত সংস্পর্শে যে শুদ্ধ-চরিত্র দেববালক সর্বপ্রথমে এসে তাঁর শ্রীচরণে জীবন উৎসর্গ করেন তিনি হচ্ছেন— পরম পূজ্যপাদ শ্রীমৎ স্বামী সচ্চিদানন্দজী মহারাজ।
একবার এক মাঘী
পূর্ণিমা উৎসবের পর সমুদয় সঙ্ঘসন্তানকে নিয়া আচার্য্যদেব কলিকাতা এসেছেন। তিনি নিজ
বিশ্রাম-কক্ষে কয়েকজন সঙ্ঘসন্তানের সাথে কথা বলছেন, এমন সময় জনৈক সেবক আসিয়া বলিল— “উপরে পাকের জন্য ডাল আনতে হবে; পয়সা দরকার।” আচার্য্যদেব গম্ভীর
ভাবে উত্তর দিলেন—“আমি
কি ডাল খাই? ভারতবর্ষের কয়জন লোক একসঙ্গে ডাল-তরকারী খেতে পায়? ডাল লাগবে না। তরকারী
যা আছে তাতেই আজ চলে যাবে। এই গরীব দেশে ডাল-তরকারী একসঙ্গে খাওয়া পাপ।”
১৯২০ খ্রীঃ খুলনা
শহরে ধৰ্ম্মসভাতে অস্থায়ী আশ্রম গড়িয়া উঠলে, তিনি শ্রীগুরুর নির্দেশে সেখানে ফিরে
আসেন এবং সঙেঘর সেবামূলক কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তখনকার দিনে ট্রেনে স্টীমারে Box
Collection করিয়া অর্থ সংগ্রহ করতে হত। সঙেঘর সেই আদি যুগে প্রথম ও প্রবীণ সন্ন্যাসীগণ
কি অমানুষিক পরিশ্রম করে যে আজিকার এই সঙ্ঘকে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করেছেন
তা আজ আমরা কল্পনাও করতে পারিনা।
১৯২২ খ্রীঃ মাঘীপূর্ণিমায়
বাজিতপুরে অন্যান্য সঙঘসন্তানের সাথে তিনি আচাৰ্য্যদেবের হাতে নৈষ্ঠিক ব্রহ্মচর্য্য
সংস্কার গ্রহণ করেন এবং ১৯২৪ খ্রীঃ মাঘীপূর্ণিমায় সঙঘ সিদ্ধপীঠে ভগবান আচাৰ্য্যদেব
অন্যান্য সঙঘ-সন্তানদের সহিত তাকে সন্ন্যাস দান করেন। সন্ন্যাসের সময় তাঁর নাম হয়
“স্বামী সচ্চিদানন্দজী”।
সঙেঘ তিনি পূজ্যপাদ
শ্রীমৎ বড় স্বামীজী”
নামে বেশী পরিচিত। তিনি ছিলেন সঙেঘর মাতৃস্থানীয়া। সকলকে ভালবেসে এবং একান্ত স্নেহ-আদর
যত্নে তিনি স্বীয় আদর্শে সকলকে গড়ে তুলতেন। সঙ্ঘের সৃষ্টি হতে তিনি ছিলেন সঙেঘর সহসভাপতি।
১৯৪১ খ্রীঃ ৮ই জানুয়ারী ভগবান আচাৰ্য্যদেবের মহাপরিনির্বাণের পর তিনি সঙঘসভাপতির পদে
আসীন হন এবং সুদীর্ঘ ৪৮ বৎসর। ঐ গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে সঙ্ঘকে সমগ্র পৃথিবীময় বিস্তার
করেন। গত ১৯৮৯ খ্রীঃ ৮ই জানুয়ারী কলিকাতা বালিগঞ্জ আশ্রমে তিনি শ্রীগুরুচরণে বিলীন
হন (৯০ বৎসর বয়সে)।
তাঁর মহান ত্যাগ
ও তপস্যা এবং অনুজ সঙ্ঘ-সন্তানদের প্রতি স্নেহ-ভালবাসার তুলনা হয়না। সদা আত্মগোপনশীল
এই ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ সারা জীবন নিতান্ত সাধারণ ও অনাড়ম্বর জীবনযাপন করে যে মহান
আদর্শ আমাদের সামনে স্থাপন করে গেছেন তা সত্যই অতুলনীয়। জানিনা, হিমালয়ের নীচে এমন
একজন শুদ্ধ পবিত্র নিষ্কলঙ্ক জীবন মহাপুরুষ বর্তমান যুগে আর ছিলেন কিনা? তার শ্রীচরণে
কোটি কোটি প্রণাম নিবেদন করি।
আরো পড়ুন:
স্বামী শ্রীপ্রণবানন্দ মহারাজ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী ও ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ
ভগবান শঙ্করাচাৰ্য্য (সংক্ষিপ্ত জীবনী)
লোকনাথ ব্রহ্মচারী’র সংক্ষিপ্ত জীবনী ও আদর্শ
ভাইভোঁটার শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা ও উৎপত্তি ইতিহাস
হিন্দুত্ববাদ ও মহাপ্রভুর অবদান
Comments
Post a Comment