শ্রীমদ্ভগবতগীতা : ‘ওম গঙ্গা গীতা চ’ মাহাত্ত্ব্য মন্ত্রের ব্যাখ্যা

ওম গঙ্গা গীতা চ সাবিত্রী সীতা সত্যা পতিব্রতা ব্রহ্মাবলি ব্রহ্মবিদ্যা ত্রিসন্ধ্যা  মুক্তিগেহিনী 
অর্ধমাত্রা চিতানন্দা ভবঘ্নী ভ্রান্তিনাশিনী বেদত্রয়ী পরানন্দা ত্বত্তার্থজ্ঞানমঞ্জুরী ।।


ভাগবত পুরাণ:  হিন্দু ধর্মের আঠারোটি পুরাণের মধ্যে একটি পূরাণ ভাগবত পুরাণ। এর মূল প্রতিপাদ্য হল ভক্তিযোগ , এখানে কৃষ্ণকে সমস্ত দেবতার ঈশ্বর বা স্বয়ং ভগবান হিসেবে দেখানো হয়েছে। এই পুরাণের লেখক বেদ ব্যাস বলে মনে করা হয়। ভাগবত পুরাণ বৈষ্ণবদের একটি শ্রদ্ধেয় পাঠ্য।


শ্রীমদ্ভগবতগীতা ভারতীয় সাহিত্যেও বেশ জনপ্রিয়। মূলত এটি ভগবান শুকদেব মহারাজ কর্তৃক পরীক্ষিতের কাছে বর্ণিত ভক্তিমার্গে থেকে ঈশ্বর প্রাপ্তির উপায়, পরামর্শ  বা দিকনির্দেশনা । এর প্রতিটি শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি প্রেমর সুবাস রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন উপাখ্যানের অনুপ্রেরণার একটি চমৎকার সংগ্রহ যার মধ্যে রয়েছে-জ্ঞান, নিখুঁত জ্ঞান, অর্থ-ভক্তি, সিদ্ধ-ভক্তি, মার্যাদ-মার্গ, অনুগ্রহ-মার্গ, দ্বৈততা, অ-দ্বৈততা। শ্রীমদ্ভগবতগীতা পাঠের পর আমরা মাহাত্ব্যপাঠ করে থাকি অনেকেই বলে থাকেন মাহাত্ব্য পাঠ না করলে গীতাপাঠের ফল বা পণ্য লাভ হয় না। বিষয়টা মূলত গীতাপাঠের প্রতি অধিক আকৃষ্ট করতেই বলা হয়ে থাকে । তদুপরি আসুন জেনে নেই, কি বিশেষত্ব রয়েছে মাহাত্ব্য মন্ত্রে।



০১) গঙ্গা - এর অর্থ হল, গঙ্গায় ডুব দিলে কোন ব্যাক্তি তার সকল পাপ নাশ করতে পারে ।তাই সবার প্রথমে গঙ্গার নাম নেয়া হয়।
০২) গীতা -যে ব্যাক্তি গীতাপাঠ করেন সেই মুহুর্তেই তার সকল পাপ নাশ হয় । তাই এখানে গীতার কথা বলা হয়েছে।
০৩) সাবিত্রী -তিনি এতটাই স্বতী ছিল যে, সে তার মৃত স্বামীর প্রাণ ফিরিয়ে এনেছিলেন। তাই এখানে সাবিত্রীর কথা বলা হয়েছে।
০৪) সীতা -ভগবান রামের স্ত্রী ,মাতা সীতা এতটাই পবিত্র ছিল যে, রাবণ শত চেষ্টার পরেও তা নষ্ট করতে পারেনি। তাই সীতা নাম মহাপবিত্র বলা হয় ।
০৫) সত্ব্যা -সত্ব্যা বলতে আমাদের আত্মার কথা বলা হয়েছে।আত্মা যেমন আমর গীতাও তেমনি অমর।
০৬) পতিব্রতা -পতিব্রতা বলতে ভগবানের প্রতি আনুগত্য থাকা।কারন একমাত্র ভগবান সকলের পতি বা পরমেশ্বর আর আমরা সকলেই তার সন্তান বা পরমাত্মার ক্ষুদ্রাংশ।
০৭) ব্রহ্মাবলী -ব্রহ্মশক্তি থেকে নির্গত শক্তি হয় ব্রহ্মাবলী। যে শক্তির বিনাশ নেই।
০৮) ব্রহ্মবিদ্যা-ব্রহ্মবিদ্যাকে আমরা ব্রহ্মাবলীর অনুরুপ বলতে পারি। এখানে শক্তির স্বরূপ হিসেবে বিদ্যাকে বোঝানো হয়েছে।



০৯) ত্রিসন্ধ্যা - ত্রিসন্ধ্যা মানে হল তিন কালের সমষ্ঠী যথা,ইহকাল, বর্তমান কাল ও পরকাল।
১০) মুক্তিগ্রিহীনি-গীতাপাঠ করলেই মুক্তি পওয়া সম্ভব।তাই এই নাম ব্যবহার করা হয়েছে।
১১) অর্ধমাত্রা -গীতায় ভগবান বলেছেন গীতা তার অর্ধেক তাই এই অর্থ ব্যবহার করা হয়েছে।
১২) চিতানন্দা-  জগতের যে আনন্দ তাই চিতানন্দা।
১৩) ভবঘ্নী-(ভব+অগ্নি) অগ্নি যেমন সোনা পুরে খাঁটি সোনায় পরিবর্তন করে। ঠিক তেমনি গীতাই পারে আমাদের ভবপুরছর সকল পাপ দুর করতে।
১৪) ভ্রান্তি নাশিনী- আমরা আমাদের চারপাশের জিনিস দেখে বিভ্রান্ত হই। আর একমাত্র গীতাই পারে আমাদের এই ভ্রান্তি নাশ করতে।
১৫) বেদত্রয়ী- ত্রিবেদের সমন্বয়ে গঠিত শক্তিই হলো বেদত্রয়ী।
১৬) পরানন্দা - অপরের দোষ না দেখে তার ভাল দিক দেখার মধ্যে যে আনন্দ।গীতায় তার কথাই বলা হয়েছে।
১৭-১৮) ত্বত্তার্থ জ্ঞানমঞ্জুরী - গীতা পৃথিবীর সকল জ্ঞান তথা বিজ্ঞানের আঁধার।তাই একে জ্ঞানমঞ্জুরী বলা হয়েছে।
জয় গীতা।। 


আরো পড়ুন:



Comments

Populer Post

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের, প্রবন্ধে সেকালের বাবুচরিত্র

‘সাগুদানা’ একাদশীতে খাবেন? না খাবেন না?

রাজা শান্তনু, সত্যবতী এবং ঋষি পরাশরের অবস্থা মহাভারতের প্রকৃতি বদলে দিয়েছে ।

উপবীত বা পৈতার মাহাত্ম্য , উপবীত বা পৈতা কাহাকে বলে?

বৃন্দাবন ত্যাগ করে চিরতরে মথুরায় গমনকালে শ্রীকৃষ্ণের বয়স কত ছিল- শাস্ত্রীয় রেফারেন্স

বাড়িতে শ্রী গণেশ ঠাকুরের প্রতিস্থাপন এবং কীভাবে বির্সজন করবেন, জেনে নিন সহজ পদ্ধতি