ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের জন্ম তৎকালীন বাংলা প্রদেশের ত্রিপুরা জেলার (বর্তমানের বাংলাদেশ) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার রামরাইল গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা জগবন্ধু দত্ত ছিলেন কসবা ও নবীনগর মুন্সেফ আদালতের সেরেস্তাদার। ধীরেন্দ্রনাথ পড়াশোনা করেছেন নবীনগর হাই স্কুল, কুমিল্লা কলেজ, এবং কলকাতার সুরেন্দ্রনাথ কলেজে। তিনি ১৯০৪ সালে নবীনগর হাই স্কুল হতে প্রবেশিকা, ১৯০৬ সালে কুমিল্লা কলেজ থেকে এফ.এ. ১৯০৮ সালে কলকাতা রিপন কলেজ হতে বি.এ এবং ১৯১০ সালে একই কলেজ হতে বি.এল পরীক্ষা পাস করেন।
ধীরেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী দরজা খুলে হাসিমুখে বললেন- কেমন আছ বাবা? (তিনি ধরেই নিলেন সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকটি তাঁর ছাত্র)
কলিমউল্লাহ বলল- স্যার ভালো আছি। আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন স্যার? (তিনি তাকে চিনতে পারেন নি। চিনতে পারার কথাও না)
তারপরও হাসিমুখে বললেন- চিনতে পারবনা কেন? চিনেছি। (মিথ্যা বলার কারণ হলো তিনি অতীত অভিজ্ঞতায় দেখেছেন, যতবার কোনো ছাত্রকে দেখে তিনি না চেনার কথা বলেছেন, ততবারই তারা ভয়ঙ্কর মনে কষ্ট পেয়েছে । এক ছাত্র তো কেঁদেই ফেলেছিল)
ধীরেন্দ্রনাথ রায় বললেন- বাবা, তোমার নামটা যেন কী?
- কলিমউল্লাহ ।
- হ্যাঁ, তাই তো। কলিমউল্লাহ। এখন পরিষ্কার মনে পড়েছে। তুমি কি খাওয়াদাওয়া করেছ?
- জি না স্যার।
- এসো আমার সঙ্গে চারটা ভাত খাও। আয়োজন খুব সামান্য। ভাত, ডিম ভর্তা। ঘরে আরো ডিম আছে। তোমাকে ডিম ভেজে দেব। ঘরে এক কৌটা ভালো গাওয়া ঘি ছিল, কৌটাটা খুঁজে পাচ্ছি না....
কলিমউল্লাহ বলল- এখন খেতে পারব না।
আপনার কাছে আমি একটা অতি জরুরী কাজে এসেছি।
- জরুরী কাজটা কী ?
- মিলিটারির এক কর্নেল আপনার সাথে কথা বলতে চান।
ধীরেন্দ্রনাথ রায় বিস্মিত হয়ে বললেন- আমার সাথে মিলিটারির কী কথা?
- আমি জানি না। তবে স্যার আপনার ভয়ের কিছু নেই। আমি সঙ্গে আছি।
ধীরেন্দ্রনাথ রায় বললেন- তুমি আমার কোন ব্যাচের ছাত্র বলো তো?
- কথা বলে সময় নষ্ট করতে পারব না। মিটিংটা শেষ করে আসি, তারপর গল্প করব।
- দুইটা মিনিট অপেক্ষা করো, ভাতটা খেয়ে নিই। আমি খুব ক্ষুধার্ত। সকালে নাশতা করিনি।
- ভাত খাবার জন্যে অপেক্ষা করার সময় নাই স্যার।
- তাহলে দাঁড়াও, পাঞ্জাবিটা গায়ে দিয়ে আসি। আমার সঙ্গে কি কথা বুঝলাম না। সে আমার ছাত্র না তো? করাচি ইউনাভার্সিটিতে আমি দু'বছর মাষ্টারি করেছি। প্রফেসর সালাম সাহেব সেখানে আমার কলিগ ছিলেন।
কলিমউল্লাহ বলল- আপনার ছাত্র হবার সম্ভাবনা আছে।কর্নেল সাহেব যেভাবে বললেন "স্যারকে একটু নিয়ে আসো"... তাতে মনে হচ্ছে উনি আপনার ছাত্র।
ধীরেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী গাড়িতে উঠে দেখলেন.. গাড়ি ভর্তি মানুষ। তারা সবাই চিন্তায় অস্থির। ধীরেন্দ্রনাথ রায় তাদের দিকে তাকিয়ে আন্তরিক ভঙ্গিতে হাসলেন। ভুলে তিনি চশমা ফেলে এসেছেন বলে তাদের কাউকে চিনতে পারলেন না। চোখে চশমা থাকলে এদের অনেককেই তিনি চিনতেন। বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা সেই গাড়িতে বসেছিলেন। তাঁদের নিয়ে যাওয়া হবে বধ্যভূমিতে।
ধীরেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী দরজা খুলে হাসিমুখে বললেন- কেমন আছ বাবা? (তিনি ধরেই নিলেন সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকটি তাঁর ছাত্র)
কলিমউল্লাহ বলল- স্যার ভালো আছি। আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন স্যার? (তিনি তাকে চিনতে পারেন নি। চিনতে পারার কথাও না)
তারপরও হাসিমুখে বললেন- চিনতে পারবনা কেন? চিনেছি। (মিথ্যা বলার কারণ হলো তিনি অতীত অভিজ্ঞতায় দেখেছেন, যতবার কোনো ছাত্রকে দেখে তিনি না চেনার কথা বলেছেন, ততবারই তারা ভয়ঙ্কর মনে কষ্ট পেয়েছে । এক ছাত্র তো কেঁদেই ফেলেছিল)
ধীরেন্দ্রনাথ রায় বললেন- বাবা, তোমার নামটা যেন কী?
- কলিমউল্লাহ ।
- হ্যাঁ, তাই তো। কলিমউল্লাহ। এখন পরিষ্কার মনে পড়েছে। তুমি কি খাওয়াদাওয়া করেছ?
- জি না স্যার।
- এসো আমার সঙ্গে চারটা ভাত খাও। আয়োজন খুব সামান্য। ভাত, ডিম ভর্তা। ঘরে আরো ডিম আছে। তোমাকে ডিম ভেজে দেব। ঘরে এক কৌটা ভালো গাওয়া ঘি ছিল, কৌটাটা খুঁজে পাচ্ছি না....
কলিমউল্লাহ বলল- এখন খেতে পারব না। আপনার কাছে আমি একটা অতি জরুরী কাজে এসেছি।
- জরুরী কাজটা কী ?
- মিলিটারির এক কর্নেল আপনার সাথে কথা বলতে চান।
ধীরেন্দ্রনাথ রায় বিস্মিত হয়ে বললেন- আমার সাথে মিলিটারির কী কথা?
- আমি জানি না। তবে স্যার আপনার ভয়ের কিছু নেই। আমি সঙ্গে আছি।
ধীরেন্দ্রনাথ রায় বললেন- তুমি আমার কোন ব্যাচের ছাত্র বলো তো?
- কথা বলে সময় নষ্ট করতে পারব না। মিটিংটা শেষ করে আসি, তারপর গল্প করব।
- দুইটা মিনিট অপেক্ষা করো, ভাতটা খেয়ে নিই। আমি খুব ক্ষুধার্ত। সকালে নাশতা করিনি।
- ভাত খাবার জন্যে অপেক্ষা করার সময় নাই স্যার।
- তাহলে দাঁড়াও, পাঞ্জাবিটা গায়ে দিয়ে আসি। আমার সঙ্গে কি কথা বুঝলাম না। সে আমার ছাত্র না তো? করাচি ইউনাভার্সিটিতে আমি দু'বছর মাষ্টারি করেছি। প্রফেসর সালাম সাহেব সেখানে আমার কলিগ ছিলেন।
কলিমউল্লাহ বলল- আপনার ছাত্র হবার সম্ভাবনা আছে।কর্নেল সাহেব যেভাবে বললেন "স্যারকে একটু নিয়ে আসো"... তাতে মনে হচ্ছে উনি আপনার ছাত্র।
ধীরেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী গাড়িতে উঠে দেখলেন.. গাড়ি ভর্তি মানুষ। তারা সবাই চিন্তায় অস্থির। ধীরেন্দ্রনাথ রায় তাদের দিকে তাকিয়ে আন্তরিক ভঙ্গিতে হাসলেন। ভুলে তিনি চশমা ফেলে এসেছেন বলে তাদের কাউকে চিনতে পারলেন না। চোখে চশমা থাকলে এদের অনেককেই তিনি চিনতেন। বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা সেই গাড়িতে বসেছিলেন। তাঁদের নিয়ে যাওয়া হবে বধ্যভূমিতে।
(জোছনা ও জননীর গল্প : হুমায়ূন আহমেদ)
আরো পড়ুন:
Comments
Post a Comment