মহান মুক্তিযুদ্ধে হিন্দুদের অবদান

মহান মুক্তিযুদ্ধে হিন্দুদের অবদান ও ত্যাগ পৃথিবীর আর ১০ টা দেশের চেয়ে আলাদা। প্রথমদিকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী কেবল হিন্দুদের বাড়ীতে হামলা চালায়। সাম্পদায়িক এই কাজে সহায়তা কারে  মুসলিম জনগোষ্ঠী। যাদের রাজাকার নামে অভিহিত করা হয়। 

" সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে
সার্থক জনম মাগো তোমায় ভালবেসে। "

রবী ঠাকুরের এই দুটি পঙক্তি কোনো বাঙালি শোনেনি এটি প্রায় একটি অভূতপূর্ব ব্যাপার। কালে কালে এই বঙ্গভূমির ভূমিপুত্ররা দেশমাতৃকাকে দেবীরূপে পূজা করে তার তরে এভাবেই অর্ঘ্য নিবেদন করে গেছে নিরন্তর। বিশ্বের একমাত্র ধর্মীয় গোষ্ঠী শাশ্বত সনাতন সংস্কৃতির ধারক ও বাহকের পক্ষেই কেবল দেশকে মাতৃস্থানে আসীন করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বিশ্বের নিকট।


" নানান দেশের নানান ভাষা
বিনা স্বদেশী ভাষা মিটে কি আশা! "
- রামনিধি গুপ্ত

হ্যাঁ, মাতৃভাষা। যা সে ভূমির সন্তানদের কাছে অমৃতসম। ১৯৪৭ সালে যখন ভারত খন্ড হয়ে পাকিস্তান সৃষ্টি হলো তখনই বাঙালির সংস্কৃতি ও ভাষা অস্তিত্ব সংকটের সম্মুখীন হয়। সেই সংকট নিবারণের জন্য প্রথম যে বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর উচ্চারিত হয় সে এই পূণ্যভূমির ভূমিপুত্র বীর শ্রী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। ৭১ এ দেশ স্বাধীন হওয়ার পেছনে এরকম আরো অসংখ্য সনাতন সংস্কৃতির বীরদের আত্মত্যাগ রয়েছে।

প্রথম রাষ্ট্রভাষার দাবি উত্থাপনকারী

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর পশ্চিম পাকিস্তানিরা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করতে চাইলে সর্বপ্রথম তার বিরুদ্ধে কথা বলেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। পাকিস্তানের পার্লামেন্টে দাড়িয়ে তিনি অত্যন্ত দৃঢ়কণ্ঠে বলেন,

" যেহেতু বাংলা একটি প্রাদেশিক ভাষা পাকিস্তানের ৬ কোটি ৯০ লাখ মানুষের মধ্যে ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাংলায় কথা বলে। তাই আমার বিবেচনায় রাষ্ট্রভাষা বাংলা হওয়া উচিত। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার সম্মান দেওয়া হোক। "

পশ্চিম পাকিস্তানের পার্লামেন্টে বিলটি পাশ হয়নি। যখন তিনি পাকিস্তান থেকে দেশে ফিরেন তখন তাকে ফুলেল সংবর্ধনা দেন তৎকালীন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। এভাবেই একজন সনাতনীর হাত ধরে ভাষা আন্দোলনের শঙ্খনাদ শুরু হয়।

এই ৮৪ বছর বয়সী মহান ভাষাসৈনিককে ৭১ সালের ২৯ শে মার্চ পাক বাহিনী কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।
 


মুক্তিযুদ্ধে হিন্দুদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ :

আজকাল বিভিন্ন উগ্র ধর্মীয় সংগঠন মুক্তিযুদ্ধে হিন্দুদের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নানা অপপ্রচার ও মিথ্যা ভাষ্য প্রচার করে থাকে। অথচ মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রত্যেক ধাপে হিন্দুদের অবদান ও ত্যাগ প্রকাশ্য দিবালোকের সূর্যরশ্মির মত দৃশ্যমান।

🌑 মেজর জেনারেল সি আর দত্ত

মুক্তিযুদ্ধে ৪ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন সি আর দত্ত ওরফে চিত্তরঞ্জন দত্ত। যার অসীম বীরত্ব ও অসাধারণ নেতৃত্বগুনে পার্বত্য সিলেট অঞ্চল শত্রুমুক্ত করে মুক্তি বাহিনী। তার অসামান্য কৃতিত্বগুনে যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তিনি বীর বিক্রম উপাধিতে ভূষিত হন।

🌑 দাস বাহিনীর বীরত্বগাথা

যখন ১৯৭১ সালে বাংলার ভাগ্যাকাশে দুর্যোগের কালো মেঘে আচ্ছন্ন হয়ে যায় তখনই আলো হয়ে জ্বলেছিলেন জগৎজ্যোতি দাস বীর বিক্রম। মহান মুক্তিযুদ্ধে তার নেতৃত্বে গঠিত ' দাসপার্টি ' আতঙ্ক হয়ে দাঁড়ায় পাক হানাদারদের কাছে। জগৎজ্যোতির মুখোমুখি হওয়া মানে হানাদারদের একটি পরাজয়ের গল্প। উত্তর-পূর্ব রনাঙ্গনে মুক্তিসেনার কাছে প্রেরণার রসদ হয়ে উঠেন তিনি। 

যুদ্ধের ট্রেনিং নিতে প্রথমে চলে যান ভারতের মেঘালয়ে। প্রায় ৩২ দিনের প্রশিক্ষণ পর্বে অ্যামবুশে পা দিলে কীভাবে বের হওয়া যায়, গ্রেনেড নিক্ষেপ, বিমান ধ্বংস, স্থলপথে শত্রুকে পরাস্ত করার কৌশলসহ গেরিলা যুদ্ধের ময়দানে নিজেকে একজন দক্ষ যোদ্ধা হিসেবে গড়ে তুলেন।

 নেতৃত্বের গুণাবলি থাকায় ৩৬ জন সাহসী যুবক নিয়ে গড়ে তুলেন পাকিস্তানের মনে ত্রাস সৃষ্টিকারী দাস কোম্পানি। শুধু তার সাহসী অভিযানের জন্য পাকিস্তান সরকার রেডিওতে ঘোষনা দিতে বাধ্য হয়, " এই রুট দিয়ে চলাচলকারী ব্যক্তিদের জানমালের দায়িত্ব নিবে না সরকার।
 " মাত্র ১৩ জন যোদ্ধা নিয়ে বানিয়াচংয়ে পাক বাহিনীর ২৫০ জন সেনা ও তার দোসরদের অগ্রগতি রোধ করে দেন! যুদ্ধে প্রাণ হারায় ৩৫ পাক জল্লাদ। ২৯ শে জুলাই জামালগঞ্জ থানা ও নৌবন্দর সাচনাবাজার শত্রুমুক্ত করে আলোচনার শীর্ষে চলে আসেন জগৎজ্যোতি। 

১৭- ই আগস্ট পাহাড়পুড়ে কমান্ডার জগৎজ্যোতির রণকৌশলে রক্ষা প্রায় অসংখ্য নর-নারী। কিন্তু ১৬-ই নভেম্বর রাজাকার বাহিনীর সহায়তায় তাকে অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে পাক বাহিনী। বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব দেওয়ার ঘোষণা দিলেও অজ্ঞাত কারণে সরে এসে তাকে বীর বিক্রম উপাধি দেন!
[ তথ্যসূত্র : দাস পার্টির খোঁজে ]

🌑 শিবনারায়ণ দাস

শিবনারায়ণ দাস যিনি জাতীয় পতাকার প্রথম নকশাকার। তৎকালীন ইকবাল হলের ১১৮ নম্বর কক্ষে বসে তিনি বাংলাদেশের পতাকার নকশা সম্পন্ন করেন। তিনি জাতীয় পতাকার নকশাকারের পাশাপাশি ছিলেন একজন গেরিলা যোদ্ধা। এমনকি তার স্ত্রী গ্রীতশ্রী দাস ও ছিলেন একজন মুক্তিযুদ্ধা।




মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ক্রীড়াক্ষেত্রে অবদান

মুক্তিযুদ্ধে জনমত গঠনে ক্রীড়াক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল। যার মধ্যে বহু হিন্দু সদস্য রয়েছেন।

১. অমলেশ সেন ২. প্রতাপ শঙ্কর হাজরা ৩. বিমল কর ৪. সুভাষ সাহা ৫. প্রাণগোবিন্দ কুন্ডু ৬. নিহার কান্তি দাস ও কোচ নন্দী বসাক।


সাংস্কৃতিকক্ষেত্রে অবদান

মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন জনমত গঠন ও মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ভূমিকা ছিল অগ্রণী। বিভিন্ন অনুপ্রেরণামূলক গান মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা জোগাত। সেই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের বড় একটা অংশ ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের। যারা সরাসরি অস্ত্র না ধরেও একেকজন যোদ্ধা ছিলেন যেমন

১. গোবিন্দ হালদার 
রচয়িতা : 
" পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল রক্ত লাল", " মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি" , "এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাঙলার স্বাধীনতা আনলো যারা। "

২. সুজেয় শ্যাম 
সুরকার : 
"বিজয়ের নিশান উড়ছে", "রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি বাংলাদেশের নাম", "রক্ত চাই, রক্ত চাই", "আয়রে চাষি মজুর কুলি। "

৩. গৌরিপ্রসন্ন মজুমদার 
রচয়িতা : 
" শোনো একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের ধ্বনি। "

৪. অংশুমান রায় 
সুরকার : " শোনো একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের ধ্বনি। "

৫. সমর দাস 
সুরকার : " পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল। " 

৬. ইন্দ্রমোহন রাজবংশী 
৭. শেফালি ঘোষ 
৮. রবীন্দ্রনাথ রায় 
৯. কল্যাণী ঘোষ 
১০. সুজিত রায় 
১১. মনোরঞ্জন ঘোষাল 
১২. তিমির নন্দী 
১৩. নমিতা ঘোষ 
১৪. সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় 
অবদান মুক্তিযুদ্ধের সময় গান গেয়ে উপার্জিত অর্থ উদবাস্তুদের জন্য ব্যায় করেন তিনি। 


মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি হিন্দুদের সহায়তা 

🌑 শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় : 

তিনি ছিলেন মিত্রবাহিনীর এয়ার মার্শাল। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ভূমিকা ছিল অগ্রণী। 

🌑 পন্ডিত রবীশঙ্কর : 

বাংলাদেশের দেশের জন্য বিদেশি জনমত গঠন ও অর্থ সহায়তার জন্য আয়োজিত কনসার্ট ফর বাংলাদেশের গায়ক ছিলেন পন্ডিত রবীশঙ্কর দাস। যার অবদান মহান মুক্তিযুদ্ধে অনস্বীকার্য। 

🌑 মিত্রবাহিনী : 

মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশকে স্বাধীন করার জন্য মুক্তিবাহীনির পাশাপাশি স্বশরীরে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশের বিজয় ত্বরান্বিত করতে ভূমিকা রাখে মিত্রবাহিনী। মহান মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর অনেক সদস্য মৃত্যুবরণ করেন। যারা ধর্মীয় ভিত্তিতে অধিকাংশই ছিলো হিন্দু সম্প্রদায়ের। 


হিন্দু গনহত্যা সংঘটিত হওয়া 

🌑 চুকনগরে সংঘটিত গনহত্যা : 

খুলনার ডুমুরিয়ার চুকনগরে ঘটে যায় ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ গনহত্যার একটি। ১৯৭১ সালের ২০- শে মে যখন প্রায় ৩০-৪০ হাজার মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ভারতের যাওয়ার জন্য জড়ো হচ্ছিল সে খবর জানতে পেরে পাক হানাদার বাহিনী সেখানে নৃশংস গনহত্যা চালায়। 

সেখানে এসেই পাক বাহিনী সেই নিরীহ ব্যক্তিদের উপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এতে করে সেখানে প্রায় ৮-১০ হাজার ব্যক্তি প্রাণ হারান! এবং গুলি করে মারার পর পাক বাহিনী মৃতদেহগুলোকে জলে ফেলে দেয়।
 যে লাশ আটখিলা ইউনিয়নের পাতাখোলা বিল থেকে ভদ্রা নদী এবং সাতক্ষীরা রোড থেকে ঘাংরাইল নদী পর্যন্ত ভাসতে থাকে। পাক বাহিনী কর্তৃক নদীতে নিক্ষেপিত লাশের সংখ্যা এত বেশি ছিল যে ভদ্রা নদীর স্রোতরুদ্ধ হয়ে পড়ে লাশ বহরের কারণে! 

🌑 জগন্নাথ হলে সংঘটিত গনহত্যা :

১৯৭১ সালে পাক বাহিনী যখন বুঝতে পারলো জগন্নাথ হল থেকে তাদের জন্য প্রতিরোধ আসতে পারে তখন বর্বর পাক বাহিনী রাতে ঘুমন্ত ছাত্রদের উপর নির্বিচারে গুলি করতে থাকে। অনেক ছাত্র প্রথমে বিষয়টা বুঝতে না পারলেও পরে বুঝতে পারে যে পাক বাহিনী কর্তৃক তাদের উপর হামলা হয়েছে।

 প্রাণভয়ে অনেকে ছাদে, অনেকে বাথরুমে লুকিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। একজন ছাত্র পাওয়ার সাথে সাথে পাক বাহিনী পৈশাচিক উল্লাসধ্বনি করে তাদের হত্যা করতে থাকতে। বাথরুম মুহূর্তেই একটা কসাইখানায় রূপ নেয়। 

হলের ছাদ থেকে গুলি করে ছাত্রদের হত্যা করে তাদের লাশগুলো পুকুরে ছুঁড়ে ফেলছিল পাক বাহিনী। শত শত ছাত্র হত্যার শিকার হয় পাকবাহিনী কর্তৃক। 

তার পাশাপাশি শিববাড়ির পাঁচজন সাধু ও মধুর ক্যান্টিনের প্রতিষ্ঠাতা মধুধাকে হত্যা করে পাক বাহিনী। 

🌑 রমনা কালী মন্দিরে সংঘটিত গনহত্যা :

১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাক বাহিনী রমনা কালী মন্দিরে হামলা চালিয়ে মন্দিরের সেবায়েত, ভক্ত ও পুরোহিত সহ প্রায় ২০০+ লোককে হত্যা করে। ২.২২ একরের মন্দির কমপ্লেক্সটি ডিনামাইট মেরে উড়িয়ে দেয়।
 ১২০ ফিট উঁচু স্তম্ভটি ও গুঁড়িয়ে দেয় বর্বর হানাদার বাহিনী। তার সাথে মন্দির থেকে প্রায় ১৫ জন কমবয়সী কিশোরীকে তুলে নিয়ে যায় বর্বর পাক বাহিনী। যাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি! 

🌑 জর্জকোট ভবনে সংঘটিত গনহত্যা : 

২৫ শে মার্চ পাক বাহিনী হামলা চালালে পুরান ঢাকার অনেক হিন্দু প্রাণ বাঁচাতে সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে আশ্রয় নেয়। কিন্তু রাজাকার কর্তৃক এ খবর পাওয়ার পর পাক বাহিনী সবাইকে ধরে স্কুলের খেলার মাঠ সংলগ্ন বারান্দায় হাটু গেড়ে নীলডাউন হতে বলেন। তারা ৩৩ জন নিরস্ত্র বাঙালিকে হত্যার উদ্দেশ্য বন্দুকে গুলি লোড করতে থাকে। তখন আমেরিকান বংশদ্ভূত স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, 

" This is a sacred place, you can not do any unholy works here. If you try to do so I must report to us Embassy at Adamjee Court Motijheel. " 

তখন তাদের সেখান থেকে নিয়ে জগন্নাথ কলেজের দুটি কক্ষে বন্দি করে রাখা হয়। তারপর তাদের আবার কিছুদূর হেঁটে নিয়ে এসে লাইনে দাঁড় করিয়ে সকলের উপর নৃসংশভাবে ব্রাশফায়ার করা হয়। এতে প্রায় সকলেই মৃত্যুবরণ করেন।
 যাদের মধ্যে প্রায় সকলেই ছিলেন হিন্দু। তাঁদের মধ্যে থেকে কেবল অলৌকিকভাবে বেঁচে যান স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষাল। 

তথ্যসূত্র :  ' মৃত্যুঞ্জয়ী মনোরঞ্জনের গল্প '
প্রকাশকাল ২৫ মার্চ ২০১৮ 


একাত্তরে হত্যার শিকার হিন্দু বুদ্ধিজীবীগণ 

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর যেসব বুদ্ধিজীবী হত্যার শিকার হন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হিন্দু ধর্মাম্বলম্বী ছিল। যেমন 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক : 
ডঃ গোবিন্দ চন্দ্র দেব ( দর্শানশাস্ত্র)  
ডঃ জ্যোতির্ময় গুহঠাকুর ( ইংরেজি সাহিত্য) 
অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য ( ফলিত পদার্থবিদ) 
সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য ( ইতিহাস) 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক : 
ডঃ শ্রী সুখারঞ্জন সমাদ্দার ( সংস্কৃত) 

চিকিৎসক : 
ডাঃ হেমচন্দ্র বসাক 
ডাঃ লালা ( সিলেট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল) 

অন্যান্য : 
রনদাপ্রসাদ সাহা ( সমাজসেবক ও দানবীর) 
যোগেশ চন্দ্র ঘোষ ( শিক্ষাবিদ, আয়ুর্বেদ চিকিৎসক) 
নূতন চন্দ্র সিংহ ( সমাজসেবক ও দানবীর)  

উল্লেখ্য এটি বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা নয়। পূর্ণাঙ্গ তালিকা হলে আরো হিন্দু বুদ্ধিজীবীদের নাম আসবে। 


পৈত্রিক ভিটা ছেড়ে দেশান্তরে বাধ্য 

১৯৭১ সালের যুদ্ধের শুরুতে পাক বাহিনীর হামলার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল হিন্দু অধ্যুষিত গ্রাম সমূহ। তাই অনেক হিন্দু প্রাণ বাঁচাদে বাধ্য হয়ে দেশত্যাগ করে। প্রায় ১ কোটি বাঙালি শরনার্থী হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয় যাদের মধ্যে অহিন্দুদের সংখ্যা শতকরা ৮ শতাংশের নিচে ছিল! 

হিন্দু নারীদের গণিমতের মাল বলে অভিহিতকরণ 

১৯৭১ সালে পাক বাহিনী যে দুই লক্ষ নারীর সম্ভ্রম হরণ করে তার সিংহভাগই ছিল হিন্দু নারী। হিন্দু নারীদের গণিমতের মাল বলে অভিহিত করে তাদের খোঁজ দিত রাজাকার বাহিনী। 


শতভাগ রাজাকারহীন ধর্মীয় গোষ্ঠী 

মুক্তিযুদ্ধে একমাত্র ধর্মীয় গোষ্ঠী হিসেবে হিন্দুরা শতভাগ রাজাকারমুক্ত ছিল। অন্যদিকে, আলবদর, আলশামস, শান্তি কমিটির মত বহু রাজাকারভিত্তিক সংঘঠন থাকলেও তাতে একজন হিন্দু ও ছিল না। কারণ আমাদের ধর্মগ্রন্থ আমাদের শিখায়, 

" জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপী গরীয়সী " - অর্থাৎ, জননী ও জন্মভূমি স্বর্গের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। 


উপসংহার 

সবশেষ এটাই পরিলক্ষিত হয় বহু অপপ্রচার থাকলেও মুক্তিযুদ্ধে হিন্দুদের ভূমিকা ছিল অগ্রণী। সূর্য থেকে সূর্যরশ্মিকে বিচ্ছিন্ন করা অসম্ভব তেমনি মহান মুক্তিযুদ্ধে হিন্দুদের অবদানও তেমনই ধ্রুবসত্য।

আরো পড়ুন:



Comments

Populer Post

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের, প্রবন্ধে সেকালের বাবুচরিত্র

‘সাগুদানা’ একাদশীতে খাবেন? না খাবেন না?

রাজা শান্তনু, সত্যবতী এবং ঋষি পরাশরের অবস্থা মহাভারতের প্রকৃতি বদলে দিয়েছে ।

উপবীত বা পৈতার মাহাত্ম্য , উপবীত বা পৈতা কাহাকে বলে?

বৃন্দাবন ত্যাগ করে চিরতরে মথুরায় গমনকালে শ্রীকৃষ্ণের বয়স কত ছিল- শাস্ত্রীয় রেফারেন্স

বাড়িতে শ্রী গণেশ ঠাকুরের প্রতিস্থাপন এবং কীভাবে বির্সজন করবেন, জেনে নিন সহজ পদ্ধতি