Posts

রামায়ণে 'গোহত্যা' সংশয়ের নিরসন

Image
রামায়ণে 'গোহত্যা' সংশয়ের নিরসন ইদানীং যেহেতু রামায়ণ নিয়ে লিখছি। আমাকে একজন একটি ব্লগের লিংক দিয়ে দেখতে অনুরোধ করলো। আমি লিংকটিতে গিয়ে হতবাক হয়ে গেলাম যে কি রামায়ণ সহ হিন্দু শাস্ত্র নিয়ে কি পরিমাণে তথ্য সন্ত্রাস করা হয়েছে।  বনবাসকালে সীতা শ্রীরাম এবং লক্ষ্মণ সহ প্রথমে গঙ্গা নদী এবং পরবর্তী যমুনা নদী পাড়ি দিয়েছিলো তখন তিনি অত্যন্ত ভক্তিপূর্ণ হৃদয়ে এ দুইনদীর স্তোত্র করেন। তিনি সেই স্তোত্রে তাদের উদ্দেশ্যে শতসহস্র গরু এবং সুন্দর সুন্দর বস্ত্র ও অন্ন দান করার প্রতিশ্রুতি করেন। এই বিষয়টি নিয়েই জ্ঞানপাপীদের গোষ্ঠী সজ্ঞানে মিথ্যাচার করছে।  সেই মিথ্যাচারকে না জেনে অজ্ঞানতাবশত অনেকেই অনুসরণ করছে। পরিণতি বিভ্রান্ত হচ্ছে। যমুনা নদী পাড়ি দেয়ার সময়ে সীতা দেবী যমুনা নদীকে উদ্দেশ্য করে প্রার্থনা করে বলেন, এই চৌদ্দ বছরের বনবাস সমাপ্ত করে ইক্ষ্বাকুবংশীয়দের রাজধানী অযোধ্যাতে শ্রীরামচন্দ্র যেন নির্বিঘ্নে ফিরে আসে। যদি তারা নির্বিঘ্নে পুনরায় অযোধ্যাতে প্রবেশ করে তবে সীতাদেবী সহস্র গরু এবং সহস্র ঘটে দেবদুর্লভ পদার্থ দান করে যমুনার পূজা করবেন বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন।নদী পাড়ি দিতে রাম লক্ষ্মণ শুষ্ক বেনা...

মনুসংহিতায় নারী অধিকার

Image
মনুসংহিতায় নারী অধিকার মনুসংহিতা সকল স্মৃতিশাস্ত্রের অগ্রগণ্য। মনুসংহিতার প্রথম অধ্যায়ে নারী এবং পুরুষের উৎপত্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে, নারীপুরুষ একে অন্যের পরিপূরক।একজন ছাড়া, অন্যজন অসম্পূর্ণ। সৃষ্টির প্রারম্ভে পরমেশ্বর নিজের দেহকে দ্বিধা বিভক্ত করে অৰ্দ্ধেক অংশে পুরুষ ও অর্দ্ধেক অংশে নারী সৃষ্টি করলেন। দ্বিধা কৃত্বাত্মনো দেহমৰ্দ্ধেন পুরুষোংভবৎ। অর্দ্ধেন নারী তস্যাং স বিরাজমসৃজৎ প্রভু।৷ (মনুসংহিতা:১.৩২) "সেই প্রভু প্রজাপতি আপনার দেহকে দ্বিধা করে অৰ্দ্ধেক অংশে পুরুষ ও অর্দ্ধেক অংশে নারী সৃষ্টি করলেন এবং তারপর সেই নারীর গর্ভে বিরাট্‌কে উৎপাদন করলেন।" মনুসংহিতার নারী-পুরুষের সাম্যাবস্থার বিষয়টি কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতাতেও পাওয়া যায়। তাঁর 'সাম্যবাদী' কাব্যগ্রন্থের বিখ্যাত 'নারী' কবিতার প্রথম স্তবকেই বলা হয়েছে : "সাম্যের গান গাই— আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই! বিশ্বে যা-কিছু মহান্ সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ তাপ বেদনা অশ্রুবারি, অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী!" মনুসংহিতায় নারী প...

স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম ও রামকৃষ্ণ মিশন

Image
স্বামী বিবেকানন্দ (১৮৬৩-১৯০২) দার্শনিক, ধর্মিয়-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর পারিবারিক নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ দত্ত। স্বামী বিবেকানন্দ এক অনন্য সাধারণ প্রতিভা—যিনি আধুনিক কালের ধর্ম-সংস্কৃতি এবং পরোক্ষভাবে ভারতীয়দের জাতীয় আত্মচেতনার রূপ দিতে সাহায্য করেছিলেন। উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হিন্দুধর্মীয় জীবনব্যবস্থা, আচরণ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অভ্যস্ত হওয়া সত্ত্বেও তিনি হিন্দুধর্মের বহু আদর্শিক বিচ্যুতির কড়া সমালোচক ছিলেন। তিনি একটি ভাবাদর্শ প্রচার এবং একটি সম্পূর্ণ নতুন কর্মসূচি প্রদান করেছিলেন। তাঁর সময়ের তুলনায় বহু দিক থেকে প্রাগ্রসর চিন্তার অধিকারী বিবেকানন্দের জাতীয় পুনর্জীবনের পথ ও পন্থা নিয়ে বহু ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ রয়েছে। উত্তর কলকাতার শিমলা বা শিমুলিয়া গ্রামের বিখ্যাত দত্ত পরিবারে নরেন্দ্রনাথ দত্ত জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা বিশ্বনাথ দত্ত একজন ধনবান এবং সফল সরকারি উকিল ছিলেন। এ পরিবার উত্তরাধিকারসূত্রে ইন্দো-মুগল যুগের সামাজিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য লাভ করেছিল। জীবনের সকল ক্ষেত্রে বিবেকানন্দের উদার দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে তার আংশিক প্রতিফলন লক্ষ করা যায়। দত্ত ...

ধর্মান্তর নিয়ে স্বামীজীর ভাবনা

Image
ধর্মান্তর নিয়ে স্বামীজীর ভাবনা সৃষ্টির শুরু থেকেই সনাতন ধর্ম অবিচ্ছিন্নভাবে বহমান। সনাতন ধর্মকে কোন খ্রিস্টাব্দ, শকাব্দ বা বঙ্গাব্দের দিন-তারিখের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখা যায় না। এমনকি কোন এক বা একাধিক ব্যক্তির নামের সাথেও সংযুক্ত করা যায় না।  কারণ, সনাতন ধর্ম কোন ব্যক্তি প্রবর্তিত ব্যক্তিকেন্দ্রিক ধর্ম নয়। যেদিন এ বিশ্ব সংসারের উৎপত্তি, সকল সৃষ্টির ধারাবাহিকতায় ঠিক সে সময়ে সনাতন ধর্মেরও উৎপত্তি। তাই এ ধর্মের শাস্ত্রীয় বিধানের মধ্যে কোনপ্রকার 'ধর্মান্তর' প্রসঙ্গ নেই। আছে শুধুই শুদ্ধিযজ্ঞ প্রসঙ্গ।  অর্থাৎ যদি কেউ কোন আসুরিক ভাবাপন্নদের পাল্লায় পরে বৈদিক ধর্ম সংস্কৃতিকে পরিত্যাগ বা লঙ্ঘন করে অশুদ্ধ হয়ে আসুরিক ভাবাপন্ন হয়ে যায় ; পরবর্তীতে সে যদি তার ভুল বুঝতে পারে তবে তাকে বৈদিক যজ্ঞের মাধ্যমে শুদ্ধ হয়ে নিতে হবে।  এ শুদ্ধ হওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে সনাতন ধর্ম যদি কেউ পালন করতে চায় তাকে ধর্মান্তরিত হওয়া না বলে শুদ্ধিযজ্ঞ করে পবিত্র হওয়া বলে। বর্তমান বিশ্বে ধর্ম নামে ব্যক্তি প্রবর্তিত অসংখ্য ধর্মীয় মতবাদ আছে।  কোন ধর্মীয় মতবাদের সাথে যখন ধর্মান্তর প্রক্রিয়া সংযুক্ত থাকবে ত...

শ্রীমৎ স্বামী তপনানন্দ গিরি

Image
শ্রীমৎ স্বামী তপনানন্দ গিরি  শ্রীমৎ স্বামী জ্যোতিশ্বরানন্দ মহারাজের অন্তর্ধানের পরবর্তীতে শঙ্কর মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ এবং আচার্য পদে অভিষিক্ত হন শ্রীমৎ স্বামী তপনানন্দ গিরি মহারাজ। পূর্বাশ্রমে তাঁর নাম ছিল শ্রীতপন কান্তি ভট্টাচার্য।  চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার অন্তর্গত মেলঘরে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৭ নভেম্বর, বাংলা ১১ অগ্রহায়ণ শ্রীমৎ স্বামী তপনানন্দ গিরি মহারাজ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শ্রীহরিপদ ভট্টাচার্য এবং মায়ের নাম শ্রীমতি শান্তি ভট্টাচার্য। বাল্যকালে শ্রীমৎ স্বামী তপনানন্দ গিরি স্বামী জগদানন্দ পুরীর ভাবাদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হন।  পড়ালেখার অবসরে তিনি মেলঘর জগদানন্দ সেবাশ্রমে শ্রীমদ্ভগবদগীতা  ও বিবিধ শাস্ত্রগ্রন্থাদি পাঠ করতেন। ধীরে ধীরে তাঁর মধ্যে তীব্র বৈরাগ্যের উদয় হতে থাকে। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের পবিত্র শিবরাত্রি তিথিতে সংসারের বন্ধন ছিন্ন করে তিনি সীতাকুণ্ডস্থ শঙ্কর মঠের তৎকালীন অধ্যক্ষ যোগীপুরুষ শ্রীমৎ স্বামী জ্যোতিশ্বরানন্দ গিরির আশ্রয় গ্রহণ করেন।  ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে জ্যোতিশ্বরানন্দ গিরি মহারাজের জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে বারাসাত মঠে তৈরি হয় অপূর্ব  নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীতে আন্তর্জাতি...

অনন্তলোকে যাত্রা করলেন স্যার অসিতবরণ ঘোষ।

Image
অনন্তলোকে যাত্রা করলেন স্যার অসিতবরণ ঘোষ। আমরা হারালাম একজন গুণী মানুষকে। অসিতবরণ ঘোষের জন্ম ১৯৩৬ সালে, যশোর শহরের বাগমারা পাড়ায়। তিনি ১৯৫৩ সালে যশোরের সম্মিলনী ইনস্টিটিউশন থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, খুলনার ব্রজলাল কলেজ থেকে আইএসসি এবং যশোরের মাইকেল মধুসূদন কলেজ থেকে ১৯৫৭ সালে কৃতিত্বের সাথে স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কঠিন ব্যাধি ও আর্থিক সংকটের কারণে স্নাতকোত্তর পাঠে ছেদ ঘটিয়ে তিনি ১৯৫৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার নিজের স্কুলেই শিক্ষকতায় যোগ দেন। তিন বছর শিক্ষকতার পর তিনি ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। দেশের বিভিন্ন কলেজে শিক্ষকতার পর সব শেষে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে তিনি ১৯৯৩ সালে অবসরগ্রহণ করেন। শিক্ষকতা জীবনের একেবারে শুরু থেকেই তিনি ছাত্রদের সাংস্কৃতিক চেতনা এবং মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধের বিকাশে একজন নিরলসকর্মী হিসেবে কাজ করে চলেছেন।  আমাদের দেশে শিশুশিক্ষায় প্রবহমান নৈরাশ্য ও নৈরাজ্য নিরসনে তিনি বিগত দুই যুগ ধরে নানাবিধ কর্মযজ্ঞের আয়োজন ও উদযাপন করে আসছেন। এতদুদ্দেশ্যে তিনিই প্রথম বিশ্বনন্দিত শিশুশিক্ষাবিদ মারিয়া মন্তেসরি প...

স্যাপিওসেক্সুয়াল কি?

স্যাপিওসেক্সুয়াল মানুষ যখন কারও প্রেমে পড়ে তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই সে চেহারা, বাহ্যিক সৌন্দর্য ইত্যাদি দেখেই প্রেমে পড়ে। কিন্তু এমন কিছু মানুষও রয়েছেন যারা চেহারা কিংবা শারীরিক সৌন্দর্য নয়, শুধু বুদ্ধিমত্তা দেখেই প্রেমে পড়েন। বিজ্ঞানের ভাষায় একেই বলা হয় ‘স্যাপিওসেক্সুয়াল’। স্যাপিওসেক্সুয়ালদের প্রেম ও যৌনতার অনুভূতি আবর্তিত হয় মস্তিষ্ককে ঘিরে। শারীরিক সৌন্দর্য বা সামাজিক অবস্থানের চেয়ে তাদের কাছে অনেক বড় হয়ে দাঁড়ায় উল্টোদিকের মানুষটির বুদ্ধিমত্তা। অপরদিকের মানুষটির গভীর চিন্তাশক্তি, কৌতূহলী মনোভাব, প্রচলিত ব্যবস্থাকে প্রশ্ন করার মানসিকতা তাদের প্রচণ্ড আকৃষ্ট করে। মনস্তাত্ত্বিক, রাজনৈতিক, দার্শনিক আলোচনা থেকে তারা রসদ সংগ্রহ করেন। এরা মনে করেন কারো যৌন আকর্ষণ শরীরে নয়, বরং তার মেধায় লুকিয়ে থাকে। আপনিও কি এমন? মিলিয়ে নিন। স্যাপিওসেক্সুয়ালেরা কখনোই হুটহাট প্রেমে পড়েন না। যেহেতু শারীরিক সৌন্দর্য তাদের টানে না, তাই প্রেমে পড়তে তাদের সময় লাগে। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আগে বন্ধুত্ব হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানসিক ও বৌদ্ধিক সংযোগ হলে তবেই আসে প্রেমের প্রশ্ন। মেধা বা বুদ্ধির আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি হল...