সমরেশ মজুমদার : জ্যোৎস্নায় বর্ষার মেঘ


বই;-জ্যোৎস্নায় বর্ষার মেঘ.
লেখক;-সমরেশ মজুমদার.

জ্যোৎস্নায় বর্ষার মেঘ সমরেশ মজুমদারের একটি অন্যতম সৃষ্টি। ১৯৯৯সাল প্রথম প্রকাশিত এবং অসাধারণ এই উপন্যাসের কাহিনী সত্যিই চমৎকার ভাবে বিন্যস্ত। উপন্যাস এর মূল চরিত্রে রয়েছেন অবন্তি ও স্বর্ণেন্দু যেখানে বাংলা উপন্যাসের জ্যোৎস্নায় বর্ষার মেঘ সমরেশ মজুমদারের নামে বইয়ের নামে একটি কঠিন অর্থ অন্যদিকে নামের অর্থ আমাদের বিষন্নতা।

সমরেশ মজুমদার বর্ণিত উপন্যাসে অবন্তি’র দু'চোখে অপার স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে ওঠা একটি মেয়ে।এম.এ.তে ফার্স্টক্লাস পাওয়া, ভাল চাকরি,বাবা মায়ের মুখের হাসি এই ছিল জীবনের লক্ষ্য।বাবা স্কুল মাস্টার কমলাকান্তের ও একান্ত ইচ্ছে ছিল এমনই। সাহিত্যানুরাগী বাবা সবসময় মেয়েকে স্বপ্ন দেখার অনুপ্রেরণা যোগাতেন। হাসিখুশিতে ভরা ছিল তাদের জীবন।স্বপ্নময়ী এই মেয়েটির জীবনে একদিন আবির্ভাব ঘটে স্বর্ণেন্দু নামের এক যুবকের। চঞ্চল রঙ্গিন ফড়িং এর মত অবন্তির নিস্তরঙ্গ জীবনে সে সঞ্চার করে অন্যরকম এক প্রাণের স্পন্দন। বাবা কমলাকান্ত চ্যাটার্জিও খুশি হয় তাদের দেখে। ঠিক করেন খুব শীঘ্রই বিয়ে দিয়ে দিবেন তাদের।


তবে রূপকথার মত এই জীবনের হঠাৎ ঘটে ছন্দপতন। হঠাৎ করেই কমলাকান্তের মৃত্যু এলোমেলো করে দেয় সবকিছু। স্কুলের শিক্ষক বাবা, নিতান্তই গরীব ছিলেন। বাড়িতে না আছে সঞ্চয়, না আছে ভবিষ্যৎ এর জন্য কিছু।পুরো সংসারের দায়িত্ব ভেঙে পড়ে অবন্তির মাথার উপর। অন্যদিকে স্বর্ণেন্দু যে- কিনা বাবার মৃত্যুর পর সবথেকে কাছের মানুষ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু অবন্তির মা স্বর্ণেন্দুকে পছন্দ করতেন না ।তিনি ভাবতেন স্বর্ণেন্দুর সাথে বিয়ে হলে আজীবন তার মতো দুঃখ-কষ্ট বয়ে যেতে হবে। কারণ স্বর্ণেন্দু ছিল অবন্তির বাবার মত একজন স্কুল শিক্ষক। একদিকে সংসারের হাল ধরতে দু'চোখের সকল স্বপ্ন এম.এ. পরীক্ষা, সংসারের স্বপ্ন হারিয়ে যায়।একই সঙ্গে দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত অন্যদিকে মায়ের বিমাতাসুলভ আচরণ অবন্তির ভালবাসা, এমনকি প্রিয় মানুষটি ও ক্রমশ দূরে সরে যেতে যেতে একসময় হারিয়ে যায় তার জীবন থেকে। অবন্তির জীবন জরাজীর্ণ,ক্রমাগত ভেঙে পড়ে সে। অনুভূতিগুলো চুরমার হয়ে, সে তৈরি হয় কেবলমাত্র একটি রক্তাক্ত মাংসের পুতুলে।

এর মাঝেই একটু একটু করে অনেকগুলো বছর কেটে যায় ।হঠাৎ করেই আবার ঘনিয়ে আসে ঘনকালো মেঘ। নিষ্ঠুর বাস্তবতায় অন্ধকার ছন্দপতন অবন্তির মায়ের মৃত্যু সংবাদে., মায়ের শেষ অস্তিত্ব সে দেখতে পেল না অবশেষ..।

এভাবে দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে কাটে ঘনকালো মুহূর্ত। এভাবেই দিন যায়,হঠাৎ করে একদিন অবন্তি তার ঘরের জানালা বন্ধ করতে গিয়ে লক্ষ্য করে রাধাচূড়া গাছের মগডালে কাকনী সন্তর্পণে নিজের মুখের খাদ্যবস্তু তার বাচ্চাদের মুখে দিচ্ছিলেন।এই দৃশ্যে অবন্তির মনে পড়ে যায় তার মায়ের কথা"তার মা প্রায়শই বলত;-আমি যখন মরে যাবো,সেদিন বুঝবে কত ধানে কত চাল"অবন্তির হিসাবটা জানা ছিল না, কিন্তু এখন অবন্তি জানে যে, সব ধানে চাল হয় না।এই সমস্ত কথাগুলো অবন্তির স্মৃতির কোঠরে চলে আসে তার মায়ের মৃত্যুর পর।এমনই অবস্থাতে অবন্তির শরীরে কাঁপুনি এল, তারপর ঝড়ের বেগে সমস্ত শিরা-উপশিরা নিংড়ে কান্না ছুটে এল চোখে।বুকের ভেতর বাতাস যেন থমকে গেল আচমকা।তারপর যেভাবে গুন টেনে টেনে মাঝি স্রোতের বিরুদ্ধে নৌকা নিয়ে যায়,সেইভাবে সে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করল।



অবশ্য অবন্তির জীবনে ঐ একবারই প্রেম এসেছিল, কিন্তু অবন্তির মা বারবার তাদের দারিদ্র্যপীড়িত সংসারের ছবিটাকে দেখিয়ে অবন্তিকে বিয়ে করতে দেননি। চারিদিকে কেবলমাত্র ধূসর মরুভূমি, কেউ কোথাও নেই।

তবে জীবনের চক্রব্যূহে অবন্তির সাথে আরো একবার দেখা মেলে সেই স্বর্ণেন্দু অবন্তির ভালবাসার মানুষ., তখন তার বয়স ৫৮। নিষ্ঠুর বাস্তবতায় শেষ হয়ে যায় তার স্বপ্ন, পরিবারের দিকে তাকিয়ে দূরে সরিয়ে দেয় স্বর্ণেন্দুকে।শরীর এবং শরীরের অনুভূতিগুলো একদিকে, আর মন সজাগ হয় অন্যদিকে শরীরের অনুভূতিগুলোকে যদি আবেগ বলা যায়, তা হলে তার জনক কখনও কখনও মন নয়; এই সত্য অবন্তী আবিস্কার করেছিল এবং নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখার অনুপ্রেরণা অবন্তি।

আরো পড়ুন:


Comments

Populer Post

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের, প্রবন্ধে সেকালের বাবুচরিত্র

‘সাগুদানা’ একাদশীতে খাবেন? না খাবেন না?

রাজা শান্তনু, সত্যবতী এবং ঋষি পরাশরের অবস্থা মহাভারতের প্রকৃতি বদলে দিয়েছে ।

উপবীত বা পৈতার মাহাত্ম্য , উপবীত বা পৈতা কাহাকে বলে?

বৃন্দাবন ত্যাগ করে চিরতরে মথুরায় গমনকালে শ্রীকৃষ্ণের বয়স কত ছিল- শাস্ত্রীয় রেফারেন্স

বাড়িতে শ্রী গণেশ ঠাকুরের প্রতিস্থাপন এবং কীভাবে বির্সজন করবেন, জেনে নিন সহজ পদ্ধতি