বিজয় দাদা ও বিজয়া বৌদির শুভবিবাহ (তাং-২৩ জুলাই-২১) স্মৃতিচারণ....


জীবনের সুখের মুহুর্তগুলো ক্ষণস্থায়ী হয়। কারণ দুঃখের মুহুর্তের তুলনায় সুখের মুহুর্তের উপলব্ধি আমাদের অনেক কম হয় । তাই তো অকোপটে বলি আমার এত দুঃখ কেন ভগবান? ২৩ শে জুলাই দিনটি আমার জীবনের সেরা দিনগুলোর মধ্যে অন্যতম। বিশ্ব মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে এ্রইবার ঈদুল আজাহার ছুটিতে আমার বাড়ি যাওয়া প্রায় অনিশ্চিত ছিল। হটাৎ আমার অন্যতম শ্রদ্ধেয় জেষ্ঠ্য ভ্রাতা বিজয় ব্যানার্জী দাদা’র বিবাহ ঠিক হল কালীগঞ্জ শহরে।



কালীগঞ্জ থেকে আমার বাড়ি প্রায় ২০ কিমি হবে। সিদ্ধান্ত হল, আমিও বিয়েতে যাচ্ছি। প্রাণ প্রিয় জন্মদাতাদের সাথে সাক্ষাৎ হবে আনন্দে আমি মাতোয়ারা, বিয়েটা তেমন মাথায় ছিল না। সেই আনন্দে  রওনা হলাম আমরা দুই ভাই, গন্তব্য সরাসরি পাত্রী (বিজয়া বৌদি) 'র বাড়ি। যেখানে একমাত্র বরযাত্রী আমি কারণ করোনা ভাইরাস তখন অনেক তীব্র তাই আর কাউকে নেয়া হয়নি। দাদার বিয়ের বরপক্ষের একমাত্র সাক্ষী হতে পেরে আমি সৌভাগ্যবান। সকাল ৭:৩০ মিনিট আমাদের বাস এসে পৌঁছাল কালীগঞ্জে। রিসিভ করতে বৌদির দাদা তন্ময় ব্যানার্জী এলেন। 
একে একে পরিবারের সকলের সাথে সাক্ষাৎ হল। বৌদির বাবা মা, টুষী মাসি, ছন্দা মাসি( শিক্ষক) তাদের মেয়ে যথাক্রমে পরসী, অর্থী ও অনুসোয়া এবং এ বাড়ির মেয়ে বৌদির কাকাতো বোন পূজা, পিউ ও নিজের বোন জবা এবং আরো অনেকে। বিবাহের সকল কার্যক্রম বৌদির কাকার বাড়িতে হয়। সকলের বিনয়, সরলতা ও আতিথেয়তা আমাকে মুহুর্তেই মুগ্ধ করল।

পাত্রী দেখা পর্বে আমি লক্ষ্য করছি বৌদির হৃদয়ে সংকোচের কম্পন। এটায় আমার জীবনে প্রথম পাত্রী দেখার অভিজ্ঞতা। সত্যিই পাত্রী সেজে নিজেকে পাত্র বা পাত্রপক্ষের সামনে উপস্থাপন করা মেয়েদের জন্য অতিব কঠিন কাজ। সমাজের এই নিয়মটা ভাঙ্গা উচিত।

নিজেকে মুহুর্তের মধ্যে ও বাড়ীর ছেলে ভাবতে শুরু করলাম। পূজা'র মা ও বাবা'র মধ্যে মায়ের সাথে অনেক কথা হয়েছিল। কেমন জানি উনার চেহারাটা মমতায় ভরা। তখনও অবদি বৌদির বাবা মার সাথে সাক্ষাৎ হয়নি। সার্বোক্ষণ আমাদের খোঁজ রাখছিলেন পূজা ও পূজা’র মা। আর ওদের বৃদ্ধ ঠাকুমার মুখে শোনা জ্ঞানগর্ভ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস স্মৃতিপটে রয়ে যাবে। এ বাড়ীর মেয়ে পিউ ছিল অটিস্টিক। এত গুণী আর মিষ্টি একটা মেয়ে পিউ বলে বোঝাতে পারব না। জানিনা, গোবিন্দ কোন জন্মের কর্মফল ভোগের জন্য পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। ওর জন্য নিরন্তর শুভকামনা রইবে। চমৎকার তার হ্যান্ড রাইটিং এবং দেয়াল জুড়ে তার হাতে আঁকা অসাধারণ কাগজের আল্পনা দেখে আমি হতভম্ব। পিউয়ের সাথে আমার অল্প সময়ে বন্ধুর্ত গড়ে ওঠে। তোকে মিস করব বোন।

কেমন করে একটি দিন পার হল বুঝতেই পারলাম না। স্বল্প সময়ে আমি, বিজয়দা, টুষী মাসি ও ছন্দা মাসি বিয়ের বাজার করে এলাম। গোধূলির লগ্নে শুভ পরিণয়। একদিনেই সকল আয়োজন অথচ কোথাও কোন কমতি পরীলক্ষিত হয়নি। বাড়ীর লোক এত অমায়িক ও আন্তরিক লিখে বোঝানোর কোন ভাষা আমার জানা নেই।

রাতে বাসার ছদের ফটোসুটের সময় আমরা বেশ খুনসুটি করেছিলাম। বিয়ে শেষে বাসর ঘর তালাবদ্ধ করে টাকা নিয়ে দরকষাকষি আমার আজীবন মনে থাকবে।

জানি না কারো মনে অজান্তে কোন কষ্ট দিয়েছি কিনা, দিয়ে থাকলে ক্ষমা প্রার্থী। হয়তো কোনদিন আর দেখা হবেনা এ বাড়ীর লোকগুলোর সাথে, সময় যে আমাদের বড্ড কম। তবে ভার্চুয়ালী কথা হতে পারে মাঝে মাঝে। গোবিন্দের চরণে কৃতজ্ঞতা জানাই এই মুহুর্তটি আমাকে দেবার জন্য। বিয়ে শেষে দাদা, বৌদি ও জবা( দাদার শালিকা) সে রাতেই প্রাইভেটে করে নারায়ণগঞ্জ রওনা দিলেন। আমি রয়ে গেলাম। কারণ যেতে হবে প্রাণের টানে, আমার জন্য পথপানে দৃষ্টিপাত করে অপেক্ষায় থাকা বাবা-মা'র কাছে।

সকালে যখন সকলের সাথে শেষ বিদায় জানিয়ে বের হব তখন হুট করে বর্ষা আরম্ভ হল। প্রকৃতি বোধয় যেতে না দিতে চাইছে না। ছাতা নিয়ে আমি ও তম্ময় বিয়াই বের হলাম। বেয়াই আমাকে স্ট্যান্ডে পৌঁছাতে সাথে এলেন। বিয়াই এর সাথে ধর্ম নিয়ে অনেক কথা হল। তিনিও এ বিষয়ে আমার সমমনা।

চৌকাঠ পেরিয়ে পা বাড়াতেই চোখের কোনাটা নোনা জলে ভিজে এল। হালাকা বৃষ্টি মস্তকে নিয়ে রওনা হলাম, গন্তব্য এবার নিজ গৃহ।

গল্পটা এখানেই শেষ বন্ধু। জীবনের সকল সুখের পর কিছু না পাওয়া থাকবে এটায় বাস্তবতা। অবশেষ দাদা ও বৌদির জন্য শুভকামনা।


আরো পড়ুন:


Comments

Populer Post

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের, প্রবন্ধে সেকালের বাবুচরিত্র

‘সাগুদানা’ একাদশীতে খাবেন? না খাবেন না?

রাজা শান্তনু, সত্যবতী এবং ঋষি পরাশরের অবস্থা মহাভারতের প্রকৃতি বদলে দিয়েছে ।

উপবীত বা পৈতার মাহাত্ম্য , উপবীত বা পৈতা কাহাকে বলে?

বৃন্দাবন ত্যাগ করে চিরতরে মথুরায় গমনকালে শ্রীকৃষ্ণের বয়স কত ছিল- শাস্ত্রীয় রেফারেন্স

বাড়িতে শ্রী গণেশ ঠাকুরের প্রতিস্থাপন এবং কীভাবে বির্সজন করবেন, জেনে নিন সহজ পদ্ধতি