অগ্নিকন্যা বিপ্লবী কল্পনা দত্ত কে ছিলেন?

অগ্নিকন্যা বিপ্লবী কল্পনা দত্তের প্রয়াণ দিবসে বিনম্র শ্রদ্ধা ০৮ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৫। কল্পনা দত্ত ১৯১৩ একজন বিপ্লবী। ১৯১৩ সালের ২৭ জুলাই চট্টগ্রাম জেলার শ্রীপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। ১৯২৯ সালে চট্টগ্রাম থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর কল্পনা কলকাতার বেথুন কলেজে যোগদান করেন।


শহীদ ক্ষুদিরাম এবং বিপ্লবী কানাইলাল দত্তের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি বেথুন কলেজ-এ গড়ে ওঠা ছাত্রী সংঘ-এ যোগদান করেন। পূর্ণেন্দু দস্তিদারের মাধ্যমে তিনি মাস্টার দা সূর্য সেনের সাথে পরিচিত হন এবং মাস্টার দা প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি, চট্টগ্রাম শাখা-য় যোগদান করেন। তার বিপ্লবী মনভাবের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে 'অগ্নিকন্যা' বলেছেন।





 বারো বছর বয়সে ক্ষুদিরাম ও কানাইলাল দত্ত-এর বিপ্লবী কর্মকান্ড স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদানে তাঁকে আগ্রহী করে তোলে এবং তিনি ছাত্রী সংঘ-এ যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে পূর্ণেন্দু দস্তিদার তাঁকে মাস্টারদা সূর্যসেন পরিচালিত বিপ্লবী গোষ্ঠীতে যোগদানে আগ্রহী করে তোলেন।

 ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল ‘চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন’ ঘটনার পর কল্পনা চট্টগ্রামে ফিরে আসেন এবং ১৯৩১ সালের মে মাসে সূর্যসেনের সাথে সাক্ষাৎ করেন। ইতোমধ্যে অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনন্ত সিংহ, গণেশ ঘোষ ও লোকনাথ বল প্রমুখ বহু নেতা গ্রেপ্তার হয়ে বিচারাধীন ছিলেন।

কলকাতা থেকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক দ্রব্যসমূহ কৌশলে বহন করে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় কল্পনা দত্তকে। তিনি গোপনে উগ্র বিস্ফোরক ‘গান-কটন’ প্রস্তুত করেন এবং বিশেষ ট্রাইবুনালে বিচারাধীন বিপ্লবীদের মুক্ত করার জন্য চট্টগ্রাম আদালত ভবনে এবং কারাগারে ডিনামাইট ফিউজ পেতে তা উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। 
কল্পনা দত্তের পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায় এবং তাঁর গতিবিধির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। এ সময়েই তিনি তাঁর কমরেড প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার-এর সঙ্গে নিয়মিত পিস্তল চালনার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।



১৯৩১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সূর্যসেন, কল্পনা ও প্রীতিলতাকে চট্টগ্রামের ‘ইউরোপীয়ান ক্লাব’ আক্রমণ করার দায়িত্ব দেন। আক্রমণের মাত্র এক সপ্তাহ পূর্বে বালকের ছদ্মবেশে আক্রমণস্থল জরিপ করতে গিয়ে তিনি গ্রেপ্তার হন।

জেলে থাকাকালীন তিনি পাহাড়তলীর বিপ্লবী ঘটনা ও প্রীতিলতার বীরোচিত আত্মহত্যার ঘটনা জানতে পারেন। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর সূর্যসেনের নির্দেশে তিনি আত্মগোপন করেন।
 ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে পুলিশ তাঁদের গোপন আস্তানা চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে এবং সূর্যসেন গ্রেপ্তার হন; কিন্তু কল্পনা ও অপর নেতা মহেন্দ্র দত্ত পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

১৯৩৩ সালের ১৯ মে কল্পনা তাঁর দলের অন্য কয়েকজন সহকর্মীসহ ধরা পড়েন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলার দ্বিতীয় বিচারপর্বে সূর্যসেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারকে ফাঁসি এবং কল্পনাকে যাবজ্জীবন কারাবাসের রায় প্রদান করা হয়। 
১৯৩৯ সালে কারামুক্ত হওয়ার পর ১৯৪০ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি পুনরায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হন সিপিআই কর্মী হিসেবে। চট্টগ্রামে ফিরে তিনি দলের কৃষক ও নারী ফ্রন্ট গঠন করেন। 

১৯৪৬ সালে চট্টগ্রাম থেকে বিধান সভার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৯৪৭ সালের পর তিনি ভারতে চলে যান এবং সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেন। ১৯৯৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কল্পনা দত্ত দিল্লিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।।



আরো পড়ুন: 

Comments

Populer Post

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের, প্রবন্ধে সেকালের বাবুচরিত্র

‘সাগুদানা’ একাদশীতে খাবেন? না খাবেন না?

রাজা শান্তনু, সত্যবতী এবং ঋষি পরাশরের অবস্থা মহাভারতের প্রকৃতি বদলে দিয়েছে ।

উপবীত বা পৈতার মাহাত্ম্য , উপবীত বা পৈতা কাহাকে বলে?

বৃন্দাবন ত্যাগ করে চিরতরে মথুরায় গমনকালে শ্রীকৃষ্ণের বয়স কত ছিল- শাস্ত্রীয় রেফারেন্স

বাড়িতে শ্রী গণেশ ঠাকুরের প্রতিস্থাপন এবং কীভাবে বির্সজন করবেন, জেনে নিন সহজ পদ্ধতি